সবুজ মিয়া গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি॥ রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ২০ দিনের হারিয়ে যাওয়া নবজাতক শিশুকে ৫ ঘন্টার মধ্যেই তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে একপ্রকার নজীর স্থাপন করেছেন গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশ। তারা প্রমাণ করে দিলেন পুলিশ জনগণের প্রকৃত বন্ধু।
মডেল থানা সুত্রে যানাযায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বড়বিল ইউনিয়নের বাগপুর চোত্তাপাড়া গ্রামের বসবাসরত একজন মা’ তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজনদের নিয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় এসে নবজাতক শিশু হারিয়ে ফেলেছেন মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। সেখানে তার পরিবারের লোকজন বলেন নবজাতকের মা’ লাকি বেগম কন্যা শিশুটিকে নিয়ে সকালে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে একাই গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দিতে নিয়ে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের ইপিআই টিকাদান কতৃপক্ষ তাকে জানান মঙ্গলবার হাসপাতালে টিকা দেয়া হয় না। পরে তিনি হাসপাতালের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশা যোগে বাড়িতে ফেরত যাওয়ার পথে বাচ্চাটির মায়ের ভাষ্যমতে পূর্বে থেকে বসে থাকা কেউ একজন রহস্য জনক উপায় অবলম্বন করে তার কাছ থেকে বাচ্চাটি নিয়ে চলে যান। অনেক খুঁজে বাচ্চাটি না পেয়ে অবশেষে তারা মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতার আবেদন করেন। সমস্ত ঘটনা শুনে মডেল থানার ওসি মোঃ দুলাল হোসেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে প্রকৃত তথ্য উৎঘাটন ও বাঁচ্চাটি উদ্ধারের জন্য তার নেতৃত্বে পুলিশ ইউনিট’কে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পরে বিভিন্ন উপায়ে ৫ ঘন্টা না যেতেই হাসপাতাল থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে গঙ্গাচড়া ৪ নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের মনাকশা নামক গ্রামে মোঃ মানিক মিয়া নামক ব্যাক্তির বাড়িতে বাঁচ্চাটির অবস্থান নিশ্চিত করে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। বাচ্চাটি কিভাবে তার মায়ের কোল থেকে তাদের কাছে এলো জানতে চাইলে মানিক মিয়া জানান দুপুর ১২ টার দিকে একজন মহিলা হঠাৎ করে তাদের বাড়িতে এসে তার স্ত্রী’র কাছে নবজাতক শিশুকে কোলে দিয়ে বলে বোন আমার বাচ্চাটিকে একটু দেখে রাখবেন আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ তাই হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে একটু পরেই আসছি আমার উপর দয়া করেন। তার অসংগতিপূর্ণ কথাবার্তা ও তাকে দেখে সে সময় মানষিক বিকারগ্রস্ত বলে মনে হলে আমি এবং আমার স্ত্রী আশপাশে বসবাসরত এলাকার লোকজনকে ডেকে এনে বিষয়টি অবগত করি। বাচ্চাটির মা’য়ের অনুরোধে সবার উপস্থিতিতে বাঁচ্চাটি রেখে দেই। তখন মহিলাটি শিশু বাঁচ্চাটি রেখে চলে যান কিন্তু দীর্ঘ ৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও বাঁচ্চাটি নিতে তার মা’ বা পরিবারের অন্য সদস্য না আসায় আমরাই চিন্তিত হয়ে বাঁচ্চার খবর গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ স্থানীয় লোকজনকে জানালে তারা মডেল থানায় খবর দেন এবং মডেল থানা পুলিশ রাতে তাদের কাছ থেকে নবজাতক শিশুকে নিয়ে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন।
বাচ্চাটি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাঁচ্চার বাবা রুকুনুজ্জামান জানান,তার আরেকটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রী লাকি বেগম দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার পর থেকেই কিছুটা মানষিক ভাবে বিকারগস্ত কিন্তু তাকে দেখে বুঝার কোন উপায় নেই। সে আজকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বাচ্চা নিয়ে বেড়িয়ে আসে পরে আমরা তাকে অনেক খোজাখুজি করে পেলেও সঙ্গে থাকা নবজাতক’কে না পেয়ে থানায় এসে ওসি স্যারের সহযোগিতা কামনা করি অবশেষে বাচ্চাটি থানা পুলিশের সহায়তায় উদ্ধারে সক্ষম হই।
গঙ্গাচড়া মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ দুলাল হোসেন জানান, আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে যতটুকু নিশ্চিত হয়েছি তিনি বাচ্চাটির মা’ লাকি বেগম একজন মানষিক বিকারগস্ত রোগী। সে নিজেই তার বাচ্চাকে আরেকজনের কাছে রেখে এসে ঘটনাটি ভিন্নখ্যাতে নিয়ে গেছে। আমরা বাঁচ্চাটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি। মা’ এবং নবজাতক”কে তার পরিবারের জিম্মায় দিয়ে তাৎক্ষণিক হাসাপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেছি।