এনামুল হক ছোটন : গ্রাম আদালত কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় অংশীজনদের সাথে সমন্বয় সভা ১৫ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ময়মনসিংহ স্থানীয় সরকার এর উপপরিচালক আজিম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম।
এ সময় জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় এর আওতাধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প বাংলাদেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিচারিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের বিশেষ করে নারী, দরিদ্র, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য পূরনের জন্য প্রকল্পটিতে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করে গ্রাম আদালতের আইনি সেবা প্রদান কার্যক্রমের উন্নয়ন এবং গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী জনগণ, বিশেষ করে নারী, দরিদ্র ও অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীকে ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গ্রাম আদালতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন বিশেষত: প্রকল্পভুক্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার (ডিডিএলজি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ (ইউএনও) স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালত কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, বাস্তবায়ন, তদারকি ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করছেন। ইতোমধ্যে ডিডিএলজি-গণ প্রকল্প এলাকার অর্ন্তভুক্ত জেলাসমূহের উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার (মহিলা মেম্বারসহ), ইউপি সেক্রেটারী এবং হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (এএসিও)’দের সাথে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ, সমন্বয় ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করছেন। তবে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সক্রিয়করণের ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো স্থানীয় জনগন বিশেষ করে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে গ্রাম আদালত সম্পর্কে যথাযথ ধারনা না থাকা। সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালত সম্পর্কে সার্বিক জনসচেতনতা তৈরির জন্য প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সররকারী- বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, গণমাধ্যম, স্থানীয় ক্যাবল অপারেটর, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও সিভিল সোসাইটির অংশগ্রহণে একটি সমন্বিত উদ্যোগ। আর এ লক্ষ্যে প্রয়োজন জেলা- উপজেলা প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, সরকারি-বেসরকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যুব সংগঠনসমূহ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মএলাকায় একটি সুসংগঠিত ও ধাৰাবাহিক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম যাতে করে স্থানীয় জনগণ বিশেষ করে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী গ্রাম আদালতের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে, দ্রুত এবং স্বাচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে।
এরই ধারাবাহিকতায় গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় অংশীজনদের অংশগ্রহণে জেলা পর্যায়ে প্রশাসনের নেতৃত্বে গ্রাম আদালত বিষয়ক ‘আউটরিচ কর্মসূচি’ আয়োজন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বিধায়, কর্মএলাকার উল্লেখিত অংশিজনদের সাথে আলোচনা, সমন্বয় ও সমঝোতার ভিত্তিতে ‘আউটরীচ কার্যক্রম’ আরো পরিকল্পিত ও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিট জেলায় ডিডিএলজি’র নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে ত্রৈমাসিক সভার আয়োজন করা হবে।
গ্রাম আদালত সম্পর্কে আউটরিচ বা প্রচার কার্যক্রম বিষয়ক সমন্বয় সভা আয়োজনের উদ্দেশ্য:
গ্রাম আদালত সম্পর্কে আউটরিচ বা প্রচার কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি অফিস/দপ্তর, বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত নিজস্ব প্রচার ও প্রচারনা বিষয়ক (আউটরিচ) কার্যক্রমের সাথে যোগাযোগ, সমন্বয় এবং পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালতের সেবা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান, প্রচারনা এবং সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণের জন্য এসে আদালতের সেবা প্রান্তীর সুযোগ নিশ্চিত করা। সূতরাং সার্বিক দৃষ্টিকোনে গ্রাম আদালত সম্পর্কে আউটরিচ বা প্রচার কার্যক্রম বিষয়ক সমন্বয় সভা।
উপরিচালক, স্থানীয় সরকার এর নেতৃত্বে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, খুব সংগঠনসমূহ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় স্থাপন করা এবং তাদের নিয়মিত/ধারাবাহিক সমন্বয় সভায় কার্যক্রমের সাথে ‘গ্রাম আদালত’ বিষয়টি সম্পৃক্ত করার দিক-নির্দেশনা দেওয়া ও তাদের প্রতিশ্রুতি আদায়ে উৎসাহি করা।জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যুব সংগঠনসমূহ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের গ্রাম আদালত বিষয়ক আইন ও বিধিমালা বিষয়ে ধারনা প্রদান করা যাতে তারা তাদের সুবিধাভোগীদের গ্রাম আদালতের সেবা বিষয়ক মুল বার্তা পৌছে দিতে পারে।
সমন্বয় সভায় স্থানীয় অংশীজনদের সকল ধরনের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।