মোঃ আনোয়ার হোসেন, ডিমলা (নীলফামারী) : মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে নেমেছে উত্তরের শীতের প্রকোপ। মাঘ আসার আগেই বাঘ কাঁপানো শীতের দাপট দেখাচ্ছে পৌষের শেষ সপ্তাহ। রাতভর হাড়কাঁপানো শীত, সেইসঙ্গে বইছে হিমশীতল বাতাস। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে উত্তরের হিমপ্রবাহ এলাকার শিশু, বৃদ্ধ ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
শুক্রবার ১০ জানুয়ারি সকাল ৬টায় উপজেলায় তাপমাত্রা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিস্তা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশা ছড়ানো প্রকৃতিতে অনুভূত হচ্ছে প্রকট কনকনে শীতের তীব্রতা। ঘণ্টায় ৮-৯ কিলোমিটার গতিতে বইছে বাতাস। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠিকমতো কাজে যেতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েছেন ভ্যানচালক, শ্রমিক, দিন মজুর থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ।
তারা বলছেন, তাপমাত্রা একই যাচ্ছে না। ওঠানামা করছে। কুয়াশায় মেঘে ঢাকা থাকছে সুর্য। আবার ভোরে সূর্য দেখা গেলেও হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপতে হচ্ছে। কাজে সমস্যা হচ্ছে, বাতাসে মনে হচ্ছে বরফ ঝরছে। মানুষের পাশাপাশি তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছে গৃহপালিত প্রাণীরাও। শীতের থেকে রক্ষা করতে গরু-ছাগলকে পরানো হচ্ছে পুরোনো কাপড় কিংবা চটের ব্যাগ।
আলিনুর ইসলাম আলী, নয়ন ইসলাম ও হাফিজুল ইসলাম সহ কয়েকজন বলেন, আজকে ভাই ঠান্ডাটা বেশি মনে হচ্ছে। আমরা তো তাপমাত্রা কত তা জানি না। কিন্তু সারারাত এতো ঠান্ডা পড়েছে লেপ আর কম্বল একসঙ্গে নিলেও ঠান্ডা কমাতে পারিনি। মনে হয়েছে তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রিতে নেমে এসেছে।
গ্রামের এক বৃদ্ধা নারী বলেন, রাতটা বরফ মনে হয়েছে আজ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় রাতে বিছানা থেকে সব আসবাবপত্র বরফ হয়ে ওঠে। ঘরের ফ্লোর খালি পায়ে পা দেওয়া যায় না। ঘরে রাখা পানি বরফ হয়ে থাকে। পানি ধরলে হাত যেন অবশ হয়ে যায়। আর আজ দিনভর সূর্য দেখা যায়নি। ঠান্ডা বাতাসে কাবু করে তুলেছে আমাদের। সন্ধ্যার পর বাড়ির উঠানে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করি।
শীতের ভরা মৌসুম চলছে। গত কদিন আগে কৃষক ও প্রান্তিক চাষীরা তার জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, আলু,ভুট্টা চাষের পর এবার ইরি ধানের বীজ বুনা,রোয়া রোপনের জন্য শীতল হাওয়া ও কুয়াশা উপেক্ষা করে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে ও ছেলে মেয়ের পড়াশোনা এবং সাংসারিক আর্থিক প্রয়োজন্ মিটানোর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকা সত্বেও বাপ-দাদার সম্বল নিজের দুটি গরু, লাঙ্গল,জোয়াল,মই কাঁধে নিয়ে ছুটছে মাঠের দিকে। প্রাতঃভ্রমনে আমার অনুসন্ধানি চোঁখ ক্যামেরা ক্লিক করতে ভুল করেনি।
কৃষক জয়শংকরের সাথে যেতে যেতে কথা হয়। জয়শংকর বলে, ভাই হামার বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ কৃষক,ঠান্ডা সহ্য করি জমি চাষে থুবার নাগবে, না হলে কলের লাঙ্গল দিয়া চাষ করির টাকা কুনঠে পামো।