সুনামগঞ্জ প্রতিনিধ॥ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপিঠ বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে পাওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট এ নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আমির শাহ্। তিনি লিখিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়টি বর্তমানে উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিচিত। প্রতিষ্টানটিতে বর্তমানে দুই হাজার শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মাসিক বেতন, পরীক্ষা ও সেশন ফি’র টাকা ছাড়াও ২১টি দোকান কোঠার ভাড়া ও আবাদযোগ্য জমির বর্গার মাধ্যমে আসা টাকা বিদ্যালয়ের আয়ের অন্যতম উৎস। এবং প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ব্যাংক একাউন্টও রয়েছে। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের যাবতীয় আর্থিক লেনদেন করার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নামমাত্র ওই ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন করে অধিকাংশ টাকা নিজের হাতে রেখে ইচ্ছেমাফিক ব্যয় করেন। আর প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রতিষ্টানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে তিনি নানা বাহানায় বিষয়টি এড়িয়ে যান। যা নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাথে মনোমালিন্য ও দুরত্ব সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পর্যন্ত গড়ালে তিনি প্রধান শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানের হিসাবের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মাধ্যমিক কর্মকর্তার নির্দেশনা আমলে নেননি। পরে আয়-ব্যায়ের হিসাব নিতে ম্যানেজিং কমিটির দুইজন অভিভাবক সদস্য ও একজন শিক্ষক প্রতিনিধির মাধ্যমে কমিটি করে দিলেও ওই কমিটির কাছে তিনি হিসাব বুঝিয়ে দেননি। শেষে আগস্ট মাসের ম্যানেজিং কমিটির সভায় বিদ্যালয়ের হিসাবের বিষয়টি আলোচনা হলে তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে হিসেব বুঝিয়ে দিবেন বলে জানান। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি তা করেননি।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকের নিকট পূর্বের ম্যানেজিং কমিটিও বারবার প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েও তা বুঝে পায়নি।
অভিযোগকারী আমির শাহ্ বলেন, প্রধান শিক্ষকের নিকট একাধিকবার প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে ব্যর্থ হয়ে এখন এলাকাবাসী ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে জেলা প্রশাসকের নিকট দ্বারস্থ হয়েছি। আমরা এসব অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে যতবারই প্রধান শিক্ষকের নিকট হিসাব চাওয়া হয়েছে তিনি গড়িমসি করে সময় পার করে গেছেন। হিসাবের কথা বললেই তিনি নানান অজুহাত দেখিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম ধানু বলেন, হিসাবে কোন গড়মিল নাই। কর্তৃপক্ষ চাইলেই হিসাব দেখানো যাবে। দোকান কোঠা ও স্কুলের পতিত জমি বর্গা দেয়ার টাকা স্কুলের ব্যাংক একাউন্টে নাম মাত্র জামা রেখে নিজের হাতে রেখে খরচ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছর দোকান কোঠা ও পতিত জমি বর্গা দিয়ে যে টাকা আসে তা স্কুলের একাউন্টে জামা রাখা হয়েছে। তার বিল ভাউচার আমার কাছে প্রমাণ হিসেবে আছে। যেকেউ চাইলেই দেখাতে পারবো। মূল কথা হলো স্কুলের সভাপতি আমির শাহ সম্প্রতি স্কুলের একটি নিয়োগে তিন জনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেয়ার পর সচ্ছ নিয়োগ প্রকৃয়ায় অন্য তিন জনের নিয়োগ হওয়ার এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও ভুয়া একটি অভিযোগ দায়ের করেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। এতবছর এরকম অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উঠেনি। নিয়োগে সভাপতি পছন্দের প্রার্থী না নেয়ায় এখন যাওয়ার সময় আমরা বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে সভাপতি।
এ বিষয়ে সভাপতি আমির শাহ বলেন, আমি সভাপতি হওয়ার পর গত জানুয়ারি থেকে স্কুলের হিসাব চাইলেও উনি এপর্যন্ত হিসাব না দেখিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। এ নিয়ে কমিটির লোকজন ও প্রধান শিক্ষকের মাঝে মনমালিন্য হলে তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মিট করে দেন। এবং তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করে দিয়ে তার হিসাব দেয়ার কথা বলে দিলেও আজ ৭ মাস পেরিয়ে যায় তবুও হিসাব দেয়নি প্রধান শিক্ষক। তাই এলাকার ও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে বাধ্য হয়েই জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করি।
অভিযোগের প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।