আব্দুল্লাহ আল মামুন দেবহাটা (সাতক্ষীরা)॥ দেবহাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকায় সীমান্ত নদী ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখনো কোন কাজ শুরু করা হয়নি। যার কারনে ঐ এলাকার মানুষের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১ এর পোল্ডার-৩ এর আওতাধীন বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারনকারী ইছামতি নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারী, ২৩ ইং সোমবার প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যেই বেড়িবাাঁধের কিছু অংশ নদী গর্ভে ধ্বসে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বেড়িবাঁধে ক্রমশ ফাঁটলের পরিমান বাড়ছিল। ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের পার্শবর্তী বাড়িঘর জুড়ে এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে করে যেকোন মূহুর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরা।
এদিকে বেড়িবাঁধে ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমান, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার ঝুকিপূর্ণ এই ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
প্রতিবছরই উপজেলার প্রায় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বয়ে চলা ইছামতি নদীর কোন না কোন এলাকার ভেড়িবাধ ভাঙ্গে। আর এতে করে বাংলাদেশ হারায় ভূকন্ড আর সাধারন মানুষকে পড়তে হয় ক্ষতির সম্মুখীন। কিন্তু এতে লাভ হয় পাউবোর কর্মকর্তাদের। নাম মাত্র মেরামত করে হাতিয়ে নেই কোটি কোটি টাকা।
তবে স্থানীয়দের মতে কিছু অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়িত নদী থেকে বালু উত্তোলন ও ভেড়ির পাশ দিয়ে গুটি কয়েক মানুষের ঠেলা জাল ফেলার কারনে এই ভেড়িবাধগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। বালু কাটার ফলে নদীর স্রোত তার গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশ পারের ভেড়িবাধে আছড়ে পড়ছে। আবার অন্যদিকে ভেড়ির পাশ দিয়ে ঠেলা জাল ফেলার কারনে ভেড়ির পাশে পলি জমতে পারছেনা।
এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে একাধকবার আলোচনা করা হলেও কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা। দেবহাটা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের যে সভা হয়েছিল তার রেজুলেশনে উক্ত মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ক্রম, ১ এর খ) বালু মহলের জন্য নির্ধারিত এলাকার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, ঘ) ইছামতি নদীর ভাঙ্গন রোধে দেবহাটা উপজেলাধীন জনছুটিপুর ও টাউনশ্রীপুর বালুমহল এর ইজারা বাতিলের সুপারিশ করা হবে, এক. ০২ এর গ) অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, ক্রম ০৪ এর ক) অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।
মজার বিষয় হলো একটি মিটিংয়ে একাধিকবার অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও তার একটিও কোন বাস্তবায়ন হয়নি বা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়নি। ভাতশালা এলাকায় যে জায়গাটি ভেঙ্গে গেছে সেই এলাকার ভেড়িবাধের পাশ দিয়ে দিনরাত ঠেলা জাল ফেলা হয় এমনকি ঐ ভেড়িবাধের অপর পাশে রয়েছে তিনটি পুকুর।
এছাড়াও উপজেলা জুড়ে ভেড়িবাধের পাশ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষ করার ফলেও ভেড়িগুলো নাজুক হয়ে পড়ে। কিন্তু এবিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন সুনজরে এনে যদি কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করত তাহলে হয়ত প্রতিবছর ভুক্তভোগীদের ভূখন্ড হারাতে হতনা। ইতিপূর্বে দেবহাটার সুশীলগাতী এলাকার রাজনগর নামে একটি পুরো মৌজা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকবছর আগে সুশীলগাতী এলাকায় ভেড়িবাধ ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। এ বিষয়ে যাতে দীর্ঘ মেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় সে বিষয়ে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন।