নিজস্ব প্রতিবেদক: গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ উল্লেখ করে দ্রুততম সময়ে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান।
সোমবার সন্ধ্যায় দেশবাসীকে উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই দাবি জানান।
শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনের ‘প্রাথমিক সাফল্য’ আখ্যা দিয়ে চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে বলে মত দেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “জনতার ঐতিহাসিক চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবশ্যই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
“একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপিসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সব রকমের সহযোগিতা করবে।”
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা বিএনপি নেতা বলেন, “১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে, সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে ‘তাঁবেদার রাষ্ট্রে’ পরিণত করা হয়েছিল। ‘খুনি’ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে।
“একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেদিন দেশের ১২ কোটি ভোটার নিরাপদে নিশ্চিন্তে ভোট দিয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, রাষ্ট্র-সরকার, শাসন-প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, সর্বোপরি একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র-সমাজ গড়তে পারবে, তখনই জনগণের ঐতিহাসিক বিপ্লবের চূড়ান্ত সফলতা আসবে।”
কোটা আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন সহিংস রূপ পাওয়ার পর তা সরকার পতনের আন্দোলনের রূপ পায়। এই আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে সহিংসতা প্রাণ যায় অন্তত ৩০০ মানুষের।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সামরিক হেলিকপ্টারে করে তিনি পৌঁছান প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। তিনি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলে খবর এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
এদিন সন্ধ্যায় রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় ছাত্র জনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ‘গণহত্যাকারী খুনি’ হাসিনার পতন হয়েছে, রাহুমুক্ত হয়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। জনতার বিপ্লবের প্রথম ধাপ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে।”
লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কখনও পরাজয় মানতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। দল-মত নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই বাংলাদেশকে কেউ কখনও পরাজিত করতে পারে না, পারবে না।”
কোটার দাবিতে শুরু হয়ে সরকার বিরোধী এই আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এভাবে গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনকালে অনেক সন্তান তার প্রিয়তম পিতাকে হারিয়েছেন, অনেক স্ত্রী তার প্রিয়তম স্বামী হারিয়েছেন।
“গুম, খুন, অপহরণ করে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের সন্তানদের শহীদী মৃত্যু, স্বজনদের ত্যাগ-তিতীক্ষা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রিয় বাংলাদেশ আরেকটি বিজয় দেখেছে।”
আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ ‘মিথ্যা মামলা’ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “আমি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের কারামুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
“একইসঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে আবার স্বাভাবিকভাবে হলে, ক্লাসে ফিরতে পারে এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে, আশা করি সেই পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করা হবে।”
দেশবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ করে তারেক রহমান বলেন, “বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। সুতরাং বিজয়ের এই আনন্দঘন সময়ে রাহুমুক্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শান্তভাবে উদ্যাপন করুন।
“অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসা পরায়ণ হবেন না, কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। অর্জিত বিজয় যাতে লক্ষ্যচ্যুত না হয়, সে ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।”