ইমাম হাছাইন পিন্টু, নাটোর॥ নাটোরের সিংড়ায় আধিপত্ব্য নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষনের ঘটনায় ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। শনিবার সকালে চলনবিলের দুর্গম ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের আধিপত্য নিয়ে পুর্ব বিরোধের জেরে রেজা-সাইফুল ও ইউপি সদস্য মানিক হোসেনের সমর্থকদের সাথে ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আনোয়ারের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। পরে ১৩ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহতদের বেশ কয়েকজনের শরীরে বন্দুকের কার্তুজের স্পিন্টার বিদ্ধ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশ এসময় ৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, এলাকার আধিপত্য নিয়ে রেজা-সাইফুল ও ইউপি সদস্য মানিক হোসেনের সাথে ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২০১৬ সালে বেড়াবাড়ি গ্রামে রেজাউল নামে একজন নিহত হয়। ওই হত্যা মামলার আসামি হয় সাইফুলসহ তার সমর্থরা। আনোয়ার হোসেন সহ তার সমর্থকরা ওই মামলার সাক্ষী। সম্প্রতি সাইফুলের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা বাদী পক্ষকে মামলা তুলে নিতে ও সাক্ষী না দিতে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন। প্রতিপক্ষ আনোয়ারের সমর্থকরা এঘটনার প্রতিবাদ জানালে নতুন করে বিরোধ বাধে। স্থানীয় মসজিদের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিরোধ চরমে ওঠে। শুক্রবার মসজিদের কমিটি গঠন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
নিহত রেজাউলের স্ত্রী মনিরা বেগম জানান, শনিবার সকালে আমার স্বামী হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামী সাইফুলের নেতৃত্বে তার স্বাক্ষীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় । হামলাকারীরা বন্দুকের গুলিও ছোড়ে। এছাড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কয়েকজন কুপিয়ে আহত করে। এই সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষনের ঘটনায় শামীম প্রামাণিক, মনসুর রহমান, আলী আজগর, আব্দুল মান্নান, সাইদুর, সবুজ, শুভ, আব্দুর রউফ, দীপন, জামাল, বাবু সরকার, আমিরুল তালুকদার নামে ১২ জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া মোজাম্মেল, লাকী বেগম ও শিরিনা বেগমকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ সাইফুল গ্রুপ। তাদের সিংড়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করার পর ১৩ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রেজাউল করিম ওরফে রেজা বলেন, জরুরি কাজে নাটোর রয়েছি। আমি ও আমার ভাই এই ঘটনার সাথে জড়িত নই বলে দাবি করেন। এদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক সাইফুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবী করে বলেন, তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে নাটোরে রয়েছেন। তাকে বিপদগ্রস্থ করতে প্রতিপক্ষরা এই ঘটনা নিজেরায় করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক হোসেন বলেন, দুই ভাই সাইফুল ও রেজাকে বিপদে ফেলাতে আনোয়ার ও তার সমর্থকরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারা সাইফুল-রেজার সমর্থকদের ওপর অর্তকিতে হামলা করে এবং অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলিও চালায়। এতে অনেকেই আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে জয়নাল,শুভ ,সেন্টু ও হেলালকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপর পক্ষে ২নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সাইফুল ও মানিক মেম্বারের নেতৃত্বে তার পক্ষের লোকজনের উপর অতর্কিত ভাবে এই হামলার চালানো হয়েছে। তারা গুলি চালিয়েছে। তার পক্ষের ১৬ জন আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মইনুল হক রিকো বলেন, আহতরা সবাই গুলিবিদ্ধ। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও গুরুতর ১১ জন কে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল মজিদ মামুন সাংবাদিকদের বলেন, বেড়াবাড়ি গ্রামে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন যাবৎ। বার বার চেষ্টা করেও ওই দুই গ্রুপের মধ্রেকার বিরোধের সমাধান করতে পারিনি। প্রশাসনের কাছে আবেদন এলাকায় শান্তি ফেরাতে তারা যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষের সময় গুলি বর্ষন করার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে কোন পক্ষ থেকে গুলি বর্ষন করা হয়েছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি পক্ষের কাছে লাইসেন্সকৃত বন্দুক রয়েছে বলে জেনেছি। সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এদের কয়েক জনের শরীরে বন্দুকের রাবার কার্টিজের অস্তিত্ব রয়েছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে বলে তিনি জানান।এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।