এস এম জহিরুল ইসলাম: রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে নিকটবর্তী শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট। এই সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন জানিয়ে আসছেন। তাঁর চেষ্টায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর এমআরটি লাইন-২ প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল, জালকুড়ি, ভূইগড় এবং সাইনবোর্ডে চারটি রেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এতে যানজট অনেকাংশে কমবে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সহজে, শান্তিপূর্ণভাবে চলাচল করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিএমটিসিএলের পরিচালক মো. আবদুল বাকী মিয়া জানান, গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক বাজেট ধরা হয়েছে ২৯,৫৭১ কোটি টাকা, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা। তিনি আরও বলেন, “বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট প্রোফর্মা ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আগস্টের মধ্যে অনুমোদন না হলে ২.৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।”
ইআরডির (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্য গত ৭ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসকের তিসির আবেদন: নারায়ণগঞ্জের যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, “যানজট নিরসনের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কমপক্ষে ১০টি বিআরটিসি বাস চালু এবং দুটি রেল ট্রেনের বগী বৃদ্ধির জন্য জোরালো আবেদন জানিয়েছি। এছাড়া মেট্রোরেলের কাজ খুব দ্রুত শুরু করার জন্য বারবার অনুরোধ করছি। এগুলো বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জবাসী চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।”
স্থানীয় গণমানুষও এই দাবির সমর্থনে স্বর তুলেছেন। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সদস্যরা বলেন, “বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বিআরটিসি নন-এসি বাসের সংখ্যা বাড়ানো এবং এসি বাস ৬০ টাকায় চালু করা জরুরি। এছাড়া বর্তমান এসি বাসের ভাড়া ৭০ টাকায় নামকরণ করতে হবে। মেট্রোরেল চালু হলে যানজট কমে যাবে এবং আমরা শান্তিতে চলাচল করতে পারব।”
সাম্প্রতিককালে জেলা প্রশাসন ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির আওতায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং যানজট সৃষ্টিকারী যানবাহন অপসারণের অভিযান চালিয়েছে। এতে যানজট কিছুটা কমলেও, মেট্রোরেল এবং বিআরটিসি বাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অপেক্ষা রয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ: ডিএমটিসিএলের তথ্য অনুসারে, সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০-এর আওতায় এমআরটি লাইন-২-এর নির্মাণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়ন নিশ্চিত হলে কাজ দ্রুততর হবে।
তবে, অর্থায়নের বিলম্ব এবং অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, “এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং যানজটের সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হয়ে যাবে।”
নারায়ণগঞ্জবাসীরা আশাবাদী যে, মেট্রোরেল এবং বিআরটিসি বাসের সংযোজনের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন জীবন সহজতর হবে।




















