স্টাফ রিপোর্টার: নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ নীতি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে জনবসতিপূর্ন আবাসিক এলাকায় স্থাপিত সিনহা পোল্ট্রি খামার নামে একটি মুরগির খামারের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড)।
গতকাল (৮ জুলাই) সোমবার বিকালে পাবনার ঈশ্বরদীতে জয়নগরের হাজীপাড়া এলাকার স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গিয়ে ঐ পোল্ট্রি ফার্মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়ার কঠোর হুশিয়ারী দেন উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি শাহাদাত হোসেন খান।
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশে এখানে এসেছি এবং সত্যতা পেয়েছি। আবাসিক এলাকায় এই ধরণের পোল্ট্রি খামার স্থাপন করে জনগণের অসুবিধা করার কোনো সুযোগ নেই। পোল্ট্রি মালিক আরজ আলীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, দ্রুততম সময়ে চারিদিকে উঁচু প্রাচীর তুলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে অথবা খামার অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে হবে। যদি তা না করা হয়, তবে পরবর্তী অভিযোগ পেলে এই পোল্ট্রি খামারের মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
জানা যায় কোনা প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই উপজেলার জয়নগরের হাজীপাড়া বাসিন্দা আরজ আলী সরদার জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় গড়ে তুলেছেন এই পোল্ট্রি খামার, যার কারণে বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধে আশেপাশের বসতবাড়ি গুলোতে বসবাস করতে পারছেন না স্থানীয়রা। অন্যদিকে খামারের নিকটবর্তী ১০ থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে মসজিদ থাকায় তীব্র দুর্গন্ধের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঈশ্বরদী ইপিজেড সহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা তাদের ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
ইতিমধ্যেই পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা খামারটি পরিদর্শন করে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নাজমুল হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,ঐ খামারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমার কর্মকর্তাদের তদন্তে পাঠিয়েছিলাম এবং আমি নিজে সেখানে যাবো, মানবদেহের জন্য আমিষের যেমন প্রয়োজন তেমনি পরিবেশের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ, এলাকাবাসীর অসুবিধা করে এমন খামার পরিচালনা করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই, আমরা তাকে খামারটি অন্যত্র স্থানান্তর করতে বলবো, তিনি যদি তা না করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।
স্থানীয় ভুক্তভোগী জুয়েল রানা জানান, এই খামারের দুর্গন্ধের কারণে ছেলে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে,মশা মাছির উৎপাতে বসবাস করা দায়,আমরা এ বিষয়ে উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় সকল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এখন পর্যন্ত কেন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না তা জানি না। তাছাড়া সাবেক ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক এই আরজ আলি গত জামাত বিএনপি সরকারের আমলে ২০০১ হতে ২০০৬ পর্যন্ত সাধারণত মানুষের উপর যে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে,সেই দাম্ভিকতা এখনো তার আছে, সে বলে সব ম্যানেজ করে রেখেছি কেউ আমার কিচ্ছু করতে পারবে না।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত ওই পোল্ট্রি খামারের মালিক আরজ আলী সরদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
স্থানীয়দের দাবি, জনবসতিপূর্ণ ওই এলাকা থেকে অতি দ্রুত অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধযুক্ত এই পোল্ট্রি খামার স্থানান্তর করা হোক।