মহিবউল্লাহ কিরন, বরগুনা :
বরগুনার আমতলীতে ইসমাইল শাহ মাজারে বাৎসরিক ওরশ মোবারক চলাকালে মাজার ভেঙে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ তৌহিদি জনতা। রবিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে আমতলী পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তার আগেই আগুনে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বিক্ষুব্ধ তৌহিদি জনতার হামলায় অন্তত ১৮/২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ মাজার স্থাপন করা হয়। ওই সময় থেকে মাজার কর্তৃপক্ষ বাৎসরিক দুইদিন ব্যাপী ওরশ উদযাপন করে আসতেছে ২৮তম ওরশ রবিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়। ওইদিন মুফতি ওমর ফারুক জেহাদীর নেতৃত্বে তাদের শতাধিক তৌহিদি জনতা এসে মাজারে পুজা ও গান-বাজনা বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু মাজার কমিটির সভাপতি অ্যাড.মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক ও হাতাহাতি সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তৌহিদি জনতা লাঠিসোটা নিয়ে মাজার ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। এতে ওই ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন।
আহতদের মধ্যে সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মোহাম্মদ মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) এবং ফজলুল করিম (২৭) কে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, শতাধিক তৌহিদি জনতা লাঠিসোটা নিয়ে এসে মাজার ভাঙচুর করে। পরে মাজারে আগুন দেয়। এ সময় ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ধাউধাউ করে জ্বলতে থাকে। মানুষ দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন।
ইসমাইল শাহ মাজার কমিটির সভাপতি অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে মাজারে হামলা চালায় এবং আগুন দেয়। এতে মাজারের ভিতরের গিলাব এবং দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, তারা ভক্তবৃন্দকে মারধর করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।
মুফতি ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, এ মাজারটি ভণ্ডের আস্তানা। এখানে ওরশের নামে গান-বাজনা,গাজা মাদক সেবন এবং নারীর আসর বসে। মাজারটির ভক্তবৃন্দ মহিলারা পীরের কবরে ও প্রধান খাদেম অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের পায়ে সেজদা দেয়। ওরশে নারী-পুরুষদের গান-বাজনা চলে প্রকাশ্যে। যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। আমার মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে এই রমজান মাসে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। তিনি তা না শুনে তার নির্দেশে তার ভক্তবৃন্দেরা আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এই ভণ্ড মাজারের খাদেম বাবুল ও তার দোসরদের শাস্তি দাবি করছি।
আমতলী ফায়ার স্টেশনের ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ২টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুনে মাজারের ভেতরের সামিয়ানা ও দুটি ঘর পুড়ে গেছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও ওসি মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম আরিফ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন আমি শোনা মাত্রই ঘটনাস্থলে এসে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই,জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলে আগুনে পুড়ে যা ক্ষতি হয়েছে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেন ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সকল পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে থাকার নির্দেশ দেন।
