যশোর অফিস : যশোরের চিকিৎসকের অবহেলা ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনায় একটি পরিবারের সুখের প্রহর আজ বিষাদে পরিণত হয়েছে। ১৮ দিনের মধ্যে প্রথম সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম, তারপরে পেটের ভিতর থেকে যাওয়া ময়লা পরিষ্কার করার জন্য দ্বিতীয়বার অপারেশন। দুই অপারেশনে খরচ প্রায় দেড় লাখ টাকা। তারপরও এ মায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পরিবারের সকল সদস্য ও স্বজনেরা।
টাকা খরচ হলেও রোগী যদি সুস্থ থাকত তাহলে দুঃখ থাকত না, দাবি পরিবারের। শারীরিক যন্ত্রণায় সন্তান জন্মের ১৮ দিন পার হলেও আদরের ধন সদ্যজাত সন্তানকে বুকে নিতে পারেননি একজন মা।
বিষয়টি যশোর সদর উপজেলার গোপালপুর আদর্শপাড়ার হাসিবুর রহমানের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুনের(১৯)। প্রসূতি এ নারী চলতি মাসের ১২ তারিখে বাচ্চা ডেলিভারির জন্য ভর্তি হয় যশোর শহরের জেল রোডস্থ বন্ধন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ক্লিনিকের ডাক্তার ইসমত আরা মৌসুমী দেখে শুনে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। ভুক্তভোগী রোগীর শ্বাশুড়ি জরিনা বেগম জানান “আমার বৌমাকে যে ডাক্তার সিজার করেছেন সে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার ৮ থেকে ১০ মিনিটের ভিতরে ওটি থেকে বের হয়েছেন। এতো তাড়াহুড়া করে কিভাবে একটি সিজার সম্পন্ন হয়?”
রোগীর স্বজনেরা জানান ডাঃ ইসমত আরা মৌসুমী কোনরকমে রোগীর পেট কেটে বাচ্চা বের করেই চলে গেছেন, তারপর ক্লিনিকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা হয়তো সেলাই দিয়েছেন। ওটি রুম থেকে ডাক্তার এত তাড়াতাড়ি কিভাবে বের হলো? এদিকে রোগীর সিজারের পর থেকে রিলিজের দিন পর্যন্ত পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন।
বৃষ্টি খাতুনের স্বামী হাসিবুর রহমান জানান স্ত্রীর যন্ত্রণার কথা দফায় দফায় ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বলেন ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। বাধ্য হয়ে ওই ক্লিনিকে আরো কয়েকদিন থেকে নিজেদের ইচ্ছায় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাই। জানতে পারি আমার স্ত্রীর সিজারের পর ভালো করে পেট পরিষ্কার না করার কারণে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। এসব কথা ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারকে জানালে তারা গুরুত্ব না দিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। ঐ ক্লিনিকে থাকাকালে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আমরা পুনরায় আরেক বেসরকারি ক্লিনিকে আমার স্ত্রীকে ভর্তি করাই। সেখানকার ডাক্তার সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা দেখে আবার অপারেশন করতে বলেন।
কারণ হিসেবে তারা জানান রোগীর পেটের ভিতর জমে থাকা রক্ত বড় বড় চাকে পরিণত হয়েছে। ওই ক্লিনিকের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে ফের অপারেশন করাতে হয়েছে, সেখানেও খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। আগামী দিনগুলোতে রোগীর কি অবস্থা হয় তা বলা মুশকিল।
রোগীর স্বামী হাবিবুর রহমান বলেন,”১৮ দিন সিজার হয়েছে, দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত সন্তানের মা তার সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে বুকে তুলে নিতে পারেননি।”
তিনি আরো জানান, বন্ধন হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাঃ ইসমত আরা মৌসুমীর বিরুদ্ধে আমরা যশোরের আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
রোগী বৃষ্টি খাতুনের মা, মাহফুজা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আমরা এ সকল বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে আমার মেয়ের মতো অন্য কোন মায়ের সন্তান এই অসহ্য যন্ত্রণার শিকার না হয়।
এদিকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, আগেও এরকম ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটলেও অদৃশ্য কোন কারনে স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি কম। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্ধন হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টনি মিয়া জানান, এ বিষয়ে আমি শুনেছি তবে ক্লিনিকে আমার যাতায়াত কম থাকার কারণে বিস্তারিত জানতে পারিনি।
ডাঃ ইসমত আর মৌসুমীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীর স্বজনদের অভিযোগ সঠিক নয়। তাদের এত সমস্যা সেটা আমাকে জানাতে পারতো।
এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন বিষয়টি এখনো আমাকে কেউ জানায়নি, অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।