যশোর থেকে মোঃ শফিকুল ইসলাম॥ যশোর মণিরামপুর রোডে বেগারীতলায় কাভার্ড ভ্যানের চাপায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ২ই নভেম্বর, শুক্রবার সকাল ৮ টার সময় উপজেলার যশোর-মণিরামপুর সড়কের ব্যাগারিতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কাভার্ডভ্যানটি রাস্তা ছেড়ে দোকান, হোটেলের মধ্যে ঢুকে গেলে চাপায় এই পাঁচ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে বাবা-ছেলেও রয়েছেন।
নিহতরা হলেন, তহিদুর রহমান (৩৫), মীর সামছুর রহমান (৬০), হাবিবুর রহমান (৫২), হাবিবুর রহমানের ছেলে তাওসিফ (৭), ও জিয়াউর রহমান (৫০)।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে যশোর থেকে সাতক্ষীরাগামী একটি কাভার্ড ভ্যান যশোর-মণিরামপুর সড়কের ব্যাগারিতলা এলাকায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এ সময় কাভার্ডভ্যানটি রাস্তার পাশে হোটেল, চায়ের দোকানসহ অন্তত দশটি দোকানে আঘাত করে। এতে চায়ের দোকানে ও হোটেলে নাস্তা করতে আসা এবং পথচারী মিলে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।
মনিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান জানান, কাভার্ড ভ্যানটি রাস্তা ছেড়ে অন্তত দশটি দোকানে আঘাত করেছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে নিহতের স্বজনদের দাবি বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রাণহনির দায়ে চালকের বিচার ও শাস্তি হয় না। এমনকি শাস্তির দাবি উঠলে কিংবা মামলা হলে শ্রমিকরা বেআইনিভাবে আন্দোলন শুরু করে। আইনকে নিজস্ব গতিতে হাঁটার ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে আইন প্রণয়ন করতে হবে। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।
উল্লেখ্য যে, দেশে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গত ১০ বছরে সড়কে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১৪ জন। সড়ক দুর্ঘটনার এক বার্ষিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে পাঁচ হাজার ৩৭১টি। এতে আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৮ জন, শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েছেন ১২ হাজার ৫০০ জন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ, সেবক ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টার আয়োজিত সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওই তথ্যে বলা হয়, ইচ্ছাশক্তি থাকলে আমরা যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়। যার প্রমাণ করোনা মহামারি মোকাবিলা। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে নজর দেয়া দরকার। এজন্য চালকদের নিরাপদ গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তাদের সুষ্ঠু-সুন্দর জীবনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
সংলাপে বলা হয় দুর্ঘটনাগুলো আমাদের হাতেই তৈরি। তাই এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যায় না। এটা ক্রাশ। চালক প্রশিক্ষিত ও দক্ষ না হলে দুর্ঘটনা আরো বাড়বে। চালকদের দক্ষ বানাতে হবে। শুধু দক্ষই নয়, চালকদের নিরাপদও বানাতে হবে। যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা সামাল দিতে পারেন। দেশে নিরাপদ চালক তৈরি করা খুব জরুরী।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দায়িত্ব অনেক উল্লেখ করে বলা হয়, চালককে আগে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এরপর তাকে চালকের লাইসেন্স দিতে হবে। গাড়ির ফিটনেস প্রক্রিয়া ও চালককে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএকে আরো সচেতন হতে হবে।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। এখনই এর রশি টেনে ধরতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয় এ কথা সত্যি, তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখাটা অসম্ভব নয়। যাদের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে, একই সাথে দুর্ঘটনা রোধে সচেনতা সৃষ্টি ও আইন মেনে চলার মানসিকতা তৈরিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে তা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সহায়ক হতে পারে।