
নিজস্ব প্রতিবেদক :
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারির বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না যশোর সিভিল সার্জন অফিসে। নতুন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবেদন থেকে শুরু করে পরিদর্শন করাকালীন প্রতি ধাপে ধাপে দিতে হয় টাকা। টাকা না দিতে পারলে ফাইল আটকে থাকে দিনের পর দিন, পড়তে হয় হয়রানিতে। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে লাইসেন্স এর শ্রেণি ভেদে আদায় করা হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
সিভিল সার্জন অফিসের একটি সুত্র জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে যশোর শহর ও তৎসংলগ্ন ৮টি নতুন প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়েছে। পুরাতনসহ বেশ কয়েকিট প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। প্রধান সহকারি পারভিন আক্তার বানু নবায়ন ফাইলের দিকে নজর না দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেন। কারন হিসেবে দেখা গেছে, পুরাতন প্রতিষ্ঠানগুলো নবায়নের সময় টালবাহনা করেন কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো টালবাহনার ঝামেলায় যান না। গত বছরেরই তিনি নতুন প্রতিষ্ঠান থেকে চার লক্ষ টাকার বেশি উৎকোচ আদায় করেছেন। যেসকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি ঢাকা বা প্রভাবশালী মহল থেকে তদবির করিযে থাকেন তাদের কাগজপত্র ঢাকা গিয়ে আটকে যায়, যশোরে আর ফেরত আসে না। পরে সেই সিভিল সার্জন অফিসে টাকা দিয়েই লাইসেন্স করে নিতে হয়।
যশোর জেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টার আছে ২শত ৮৮টি, কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২শত ৩৪টি। বাকিগুলি নানান আইনি জটিলতায় বন্ধ আছে। জেলায় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক নতুন আবেদন জমা পড়ে সিভিল সার্জন অফিসে, সাথে থাকে পুরাতন লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া। সিভিল সার্জন অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ প্রধান সহকারি পারভিন আক্তার বানু বিপুল পরিমান অর্থ উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেন বলে বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে।
তাদের দাবি, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স দেখভাল করেন প্রধান সহকারি পারভিন আক্তার বানু। তাকে খুশি করতে না পারলে অফিসের কোন কাজ আগায় না। বিভিন্ন সময়ে ক্লিনিক ও ম্যানেজারদের তার কক্ষে তদবির করতে দেখা যায়।
ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিকরা জানান, পারভিন আক্তার বানুর চাহিদামতো টাকা দিতে পারলে তড়িৎ গতিতে কাজ হয়, না দিতে পারলে কোন কাজ হয় না। তিনি তখন জানিয়ে দেন তার কাজ এখানে হবে না, তাকে ঢাকায় যেতে হবে।
তারা আরোও জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মানুযায়ী কোন নতুন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে হলে সর্বপ্রথম তাকে অনলাইনে তাকে আবেদন করতে হবে। তারপর আবেদন কপি ও কাগজপত্র সিভিল সার্জন অফিসে জমা দিতে হবে। ঢাকা থেকে নির্দেশনা আসলে সরকার নির্ধারিত ৪৭টি শর্ত পূরণ আছে কি না সিভিল সার্জন সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। সিভিল সার্জনের মতামতের উপর ভিত্তি করে লাইসেন্স পাবে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু যশোর সিভিল সার্জন অফিসে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাধ্যতামুলক জমা দিতে হয়। আবার সিভিল সার্জন অফিসের পরিদর্শন টিমের নাম ভাঙ্গিয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার দিনই নেওয়া হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এসব টাকা নেন প্রধান সহকারি পারভিন আক্তার বানু। টাকা হাতে নিয়ে তিনি মালিকদের বলেন, আর কোন খরচ নেই। লাইসেন্স পাওয়া পর্যন্ত সব দায়িত্ব তার। যদি আরো কিছু টাকা দেন তাহলে সিভিল সার্জন পরিদর্শনে না গিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দিবেন। সিভিল সার্জন পরিদর্শনে গেলে ফাইল আটকে যেতে পারে এই ভয়ে ক্লিনিক মালিকেরা ঘুষ দিয়ে অফিস ত্যাগ করেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সামনের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৩ বছর তার কাগজপত্র নবায়ন করা হয়নি। ব্যাংক চালান করে একাধিকবার সিভিল সার্জন অফিসে জমা দিলেও আমাদের কাজ করে দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তিনি টাকা নিতে পারবেন না বলে আমাদের বলছে আপনাদের ঢাকায় যেতে হবে।
শহরের জেল রোডের এক ক্লিনিকের মারিক জানান, তিনি নতুন প্রতিষ্ঠান করার পর থেকে লাইসেন্স নেওয়ার জন্য হাজারবার গেলেও কাজ হয়নি। পরে এক কর্মকর্তার পরামর্শে প্রধান সহকারিকে খুশি করে আসার পর তিনি আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত কাজ হবে।
ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের একটি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিকের মালিক জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে আগে প্রায়ই সময় অভিযান পরিচারলনা হতো। কিন্তু পারভিন বানুকে খুশি করে আসার পর থেকে আর কোন সমস্যা হয় না। লাইসেন্সও পেয়েছেন দ্রুত সময়ে। তাছাড়াও অভিযানের আগেই তিনি খবর পেয়ে যান।
ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে প্রধান সহকারি পারভিন আক্তার বানুর সাথে টেলিফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আপনি সিএস স্যারকে কল দেন।
পরে সিভিল সার্জন ডাঃ মাসুদ রানা’র নিকট টেলিফোনে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম হয় কি না আমি জানি না। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তিনি আগে কি করেছেন সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে যদি কেউ আমাদেরকে অভিযোগ করেন তাহলে আমি ব্যবস্থা নিবো। এসকল তথ্য আপনাদের না দিয়ে আমাদের দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম।