
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি॥ নওগাঁর রাণীনগরে আব্দুল হান্নান (৫০) নামে এক ধান ব্যবসায়ী এলাকার কৃষকদের প্রায় দেড়-দুই কোটি টাকার ধান নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ফলে চরম হতাশায় পরেছেন তারা।
তবে পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগীদের আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেন,উপজেলার পিরেরা গ্রামের মৃত মুনছের আলীর ছেলে আব্দুল হান্নান দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে উপজেলার বেতগাড়ী বাজারে ধানের আড়ৎ খুলে ব্যবসা করে আসছিলেন। ব্যবসার সুবাদে এলাকার কৃষকরা তার নিকট নগদ-বাঁকীতে ধান বিক্রি করে থাকেন। এরই মধ্যে ওই এলাকার প্রায় দেড়-দুইশ কৃষকের ধান বাঁকী নেয় ব্যবসায়ী হান্নান। গত সপ্তাহে কৃষকদের ধানের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। হঠাৎ করেই গত বুধবার রাতে স্ব-পরিবারে ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান ধানের আড়ৎ বন্ধ করে বাড়ী থেকে উধাও হয়ে যান। এর পর থেকে ব্যবসায়ীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলেও থানা পুলিশ কৃষকদের লিখিত অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
উপজেলার মেরিয়া গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ইরি মৌসুম থেকে চলতি আমন মৌসুমের প্রায় ২৯লক্ষ ৫৫হাজার টাকার ধান বাঁকী বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ী হান্নানের নিকট। গত বৃহস্পতিবারে ধানের ১৫লক্ষ টাকা দেবার কথা ছিল এবং অবশিষ্ট টাকা আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে ব্যবসায়ী হান্নান বুধবার রাতে হঠাৎ করেই স্ব পরিবারে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেন। তিনি দাবি করেন, ব্যবসায়ী হান্নান এলাকার প্রায় দেড়-দুইশ’কৃষকের প্রায় দেড়-দুই কোটি টাকার ধান বাঁকী নিয়ে পালিয়ে গেছেন। ফলে এলাকার কৃষকরা ঋণ পরিশোধ ও আগামী ইরি আবাদ নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন।
পিরেরা গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে কৃষক শাহীন বাবু বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ৮বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধানের আবাদ করেছিলেন। জমির ধান কেটে প্রায় এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকার ধান হান্নানের নিকট বাঁকীতে বিক্রি দিয়েছেন। টাকা দেবার কথা বলে রাতা-রাতি পালিয়ে গেছে।এতে হালচাষ, কিটনাশক দোকানের বাঁকীসহ আবাদের জন্য করা বিভিন্ন ঋণ নিয়ে চরম বেকায়দায় পরেছেন।ধান বিক্রির টাকা না পেলে হয়তো আগামী ইরি আবাদ হবেনা বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে ব্যবসায়ী হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।তবে হান্নানের বড় ভাই আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের মূল বাড়ী থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে আলাদা বাড়ী করে বসবাস করছি। আমিও শুনেছি ছোট ভাই হান্নান এলাকার লোকজনের নিকট থেকে ধান নিয়ে পালিয়ে গেছে। তবে কে, কিভাবে লেনদেন করেছে বা কে কত টাকা পাবে তা বলতে পারছিনা।
রাণীনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কয়েকজন কৃষক ধানের টাকা নিয়ে ব্যবসায়ী হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। তাদের তথ্য প্রমানাদি দেখে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।