আবু সুফিয়ান পারভেজ ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম)॥রাত সাড়ে ৯টা। চারপাশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন। সড়কের পাশের জমিতে কোর্ট কেটে ফ্লাডলাইটের আলোয় চলছে খেলা। র্যাকেটের বাড়ি খেয়ে হাওয়ায় উড়ছে কর্ক। কেউ সমস্বরে পয়েন্ট গুনছেন, কেউবা সুযোগ পেয়ে সজোরে ‘চাপ’ বসিয়ে দিচ্ছেন বিপক্ষ দলের কোর্টে। কোর্টের চারপাশে র্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে অন্যান্য খেলোয়াড়, দর্শক। র্যাকেটের বাড়ি আর দর্শকের হাতের তালিতে মুখর পুরো এলাকা।
এ চিত্র গত রোববার রাতের, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পাইকেরছড়া এলাকার। এখানে সড়কের পাশে মাওলানা পাড়া ঈদগাহ মাঠে কোর্ট কেটে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করেছেন পাড়ার কিছু তরুণ।
বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সেখানে চলছিল ব্যাডমিন্টন খেলা। কোনো টুর্নামেন্ট না হলেও আনন্দে উচ্ছ্বসিত ছিল সবাই। কর্ক হাওয়ায় উড়িয়ে চলছিল দুই পক্ষের জেতার লড়াই।
শীতের সন্ধ্যায় পাড়া কিংবা মহল্লায়, শহর কিংবা গ্রামে ব্যাডমিন্টন খেলার এ চিত্র খুব পরিচিত। শীত এলেই বাড়ির আঙিনা বা অন্য কোথাও জমে ওঠে এই মৌসুমি খেলা। ছেলে-বুড়ো, তরুণ-তরুণী সবার কাছেই সমান জনপ্রিয় এই ব্যাডমিন্টন খেলা। তাই সন্ধ্যা নামার পরপরই হাতে র্যাকেট নিয়ে মাঠে হাজির হন অফিসফেরত কর্মজীবী মানুষ আর স্কুল–কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তাঁদের হইহুল্লোড়ে মুখর থাকে পুরো এলাকা।
এবার শীত নামতেই উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় জমে উঠেছে ব্যাডমিন্টন খেলা। উপজেলা সদরে দেওয়ানের খামার, কলেজ পাড়া, সাধীন বাজার, বিসমিল্লাহ বাজার, সোনাহাট, বলদিয়া, শিলখুড়ি, পাথরডুবিসহ বিভিন্ন এলাকায় কোর্ট তৈরি করে চলছে এ খেলা। সন্ধ্যার পরপরই খেলোয়াড়দের পদচারণে জমে ওঠে খেলার মাঠ। কোথাও কোথাও খেলা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
ব্যাডমিন্টন খেলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কোর্ট তৈরি পর্যন্ত একটু খরচপাতি হয়। আর এই খরচ নেওয়া হয় বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে। প্রতিবারের মতো এবারও চাঁদা তোলার দায়িত্ব পড়েছে স্থানীয় তরুণ মো. মেহেদী হাসান এর ওপর। তাই শীত আসার আগে থেকেই শুরু হয়েছে তাঁর চাঁদা তোলার কার্যক্রম। সব কাজ শেষে কোর্ট প্রস্তুত হয়েছে সাপ্তাহ খানেক আগে। এখন পুরোদমে চলছে তাঁদের খেলা।
ভূরুঙ্গামারী কলেজ পাড়া এলাকায় কোর্টের পাশেই কথা হয় মিঠুনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতি শীতেই তাঁরা ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করেন। তাঁদের কেউ চাকরিজীবী, কেউ এলাকার বড় ভাই, আবার কেউ শিক্ষার্থী। তবে বছরের এই সময়টাতে সবাই সন্ধ্যার পর নিজেদের অবসরে রাখেন ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য। সন্ধ্যা হওয়ার পরপরই খেলার জন্য মাঠে উপস্থিত হন তাঁরা। মিঠুনের মতে, এই খেলার মজা কিংবা উত্তেজনার কোনো কমতি নেই। এটা একই সঙ্গে শারীরিক ব্যায়ামের কাজ করে। সোনাহান ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ফিটনেস ধরে রাখার জন্য এ খেলার বিকল্প নেই।
কোর্টের চারপাশে একই সঙ্গে অবস্থান করেন দর্শক ও খেলোয়াড়েরা। খেলা চলাকালীন কোর্টে কেউ ভালো ‘সার্ভ’ করলে বাহবা দেন তাঁরা। আবার যখন কোর্ট থেকে আওয়াজ আসে ‘থার্টিন হোপ’ বা ‘ফোরটিন লাস্ট’, তখন তাঁদের মাঝেও শুরু হয় হুড়োহুড়ি। অপেক্ষায় থাকেন মাঠ দখলের জন্য।