
গঙ্গাচড়া (রংপুর) সংবাদদাতা :
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবিতে শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতারা ১১টি পয়েন্টে এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন অনেকে। এরই অংশ হিসেবে গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর তিস্তা সেতু এলাকায় প্রথম দিন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এছাড়া অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলন এর জোনায়েদ সাকি, রংপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক শামসুজ্জামান সামু, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহাফুজ উন- নবী ডন। রংপুর জেলার গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক তোহিদুর রহমান, গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ওয়াহিদুজ্জামান মাবু সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আখেরুজ্জামান মিলন, সদস্য সচিব আইয়ুব আলী, যুগ্ন সচিব নাজিম উদ্দিন প্রামানিক লিজু, রংপুর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরীফ নেওয়ার জোহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অবস্থান কর্মসূচির আলোচনায় বিগত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সমালোচনা করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টুকু বলেন, আজকে নিশ্চিন্তে নিঃস্বাস নিচ্ছি তার সবচেয়ে বড় অবদান রংপুরের কৃতি সন্তান আবু সাঈদের। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশকে এক শ্মশানে পরিণত করেছে। সে শ্মশান পরিচালিত করতে গিয়ে আমাদেরকে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এখন ঢাকা শহর একটি দাবি দাওয়ার শহরে পরিণত হয়েছে। এটার পিছনেও আওয়ামী লীগের হাত আছে আওয়ামী লীগের টাকা আছে সেই টাকা দিয়েই তারা এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গঙ্গার ৪৫ হাজার কিউসেক পানি আদায় করেছিল। পানির হিস্যা দিতে ভারতকে বাধ্য করেছিল। তাই আজ বিএনপি সহ অন্যান্য দল সবাই আমরা পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য হাজির হয়েছি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন পানির ন্যায্য হিস্যা ভারতের নিকট থেকে আদায় করেছিল। প্রফেসর ইউনূসের কাছে আবেদন আপনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দর্শন দেখে তার পদক্ষেপটি অনুসরণ করুন। তিস্তার পানির জন্য জাতিসংঘ সহ সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গিয়ে তিস্তা সহ যতগুলো অভিন্ন নদী ভারত থেকে আমাদের দেশে এসেছে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে প্রত্যেকটি নদীর পানির হিস্যা নিন। এসময় তিনি ড. ইউনূসের নিকট একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং হাসিনা যেন বাংলাদেশ চিরতরের জন্য না আসতে পারে সেই আবেদন জানান।
গণসংহতি আন্দোলন এর জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পরে আমরা বাংলাদেশকে নতুন করে রূপান্তর করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা এমন এক সমাজ গড়তে চাই যেখানে প্রত্যেক মানুষের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক মর্যাদা থাকবে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের উল্টো স্রোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ ২০২৪ সালে দেশের মানুষ চেয়েছেন বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ কারো কাছে মাথা নত করবে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার শুধু গদি বাঁচানোর জন্য দেশের স্বার্থ দেশের মর্যাদা বিকিয়ে দিয়েছেন। তাই তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আমরা পাইনি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নদীর যে যে দেশের অববাহিকায় রয়েছে তারা সবাই পানি পাবে। কিন্তু আমরা দেখছি ভারত আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে। তারা অসংখ্য বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করেছে। যখন নদী পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে তখন তারা আবার গজলডোবায় বাঁধ দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রকে দায় দেয় কেন্দ্র সরকার রাজ্য সরকারকে দায় দিয়ে টালবাহানা করে আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। বর্ষাকালে যখন তারা পানি ছেড়ে দেয় তখন দেশে বন্যা শুরু হয়। তারা একবার পানিতে শুকিয়ে মারে আরেকবার ডুবিয়ে মারে। দেশের গনতন্ত্রকামী মানুষ জুলাই-আগস্টে গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিদায় করেছে। ভারতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন যদি সুসম্পর্ক চান তাহলে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক করতে হবে। নদীর পানির ন্যায্য হিসাব বন্টন করতে হবে। অবিলম্বে ৫৪ টি নদীর ন্যায্য হিসাব দাবিতে আলোচনা শুরু করেন। যদি তারা মানে তাহলে প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের বিষয়টি তুলতে হবে। আর সেজন্যই আমাদের ঐক্য দরকার। এই তিস্তা পরিকল্পনা সারা দুনিয়ার কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরবে যে আমাদের ন্যায্য পানি দরকার। জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারি আসুক না কেন দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে বাধ্য থাকবে।
উল্লেখ্য ১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে ১১৫ কিলোমিটার তিস্তা নদীর তীরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করবেন। অবস্থানে রাত্রিযাপনসহ সেখানেই রান্না ও লোকসংগীতের আয়োজন করবেন আয়োজকরা। এছাড়া তারা তিস্তার অবস্থা বিশ্ববাসীকে জানাতে রাতে হাজার হাজার মশাল জ্বালাবেন। দুদিন অবস্থানের জন্য তৈরি হয়েছে মঞ্চ, রাত্রিযাপনের জন্য প্যান্ডেলসহ রয়েছে নানা আয়োজন। রয়েছে পদযাত্রা, আলোচনা, তিস্তায় দাঁড়িয়ে মশাল প্রদর্শন, ডকুমেন্টরি প্রদর্শনসহ নানা আয়োজন। তিস্তাপাড়ের মানুষ এ আন্দোলনে অংশ নিয়ে নদীটির করুণ কাহিনী বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চান, চান পানির ন্যায্য হিস্যাসহ তিস্তায় বাঁধ ও খনন। এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের। ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সেখান থেকেই তিস্তার আন্দোলন কিভাবে হবে তা নির্দেশনা আসবে বলেও জানান আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।