সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি॥ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছে দুধের আউটা গ্রামের মৃত লেবু মিয়ার ছেলে চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সদস্য মল্লিক মিয়া।
সাংবাদিকরা বলছেন, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে নির্বিঘ্নে চোরাচালান পাচার করার জন্য তাদের হয়রানি করার চেষ্টা করছে চোরাচালানি সিন্ডিকেট। চোরাচালানি সিন্ডিকেট চোরাচালানের সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁ এর ছেলে চোরাচালানি সিন্ডিকেটের মুলহোতা আবুল বাসার খান নয়ন এর নির্দেশে এ মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকরা।
এ মামলার বাদী ও তিন স্বাক্ষী একই চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে এমামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে এপ্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তিন স্বাক্ষী।
গত (২২সেপ্টেম্বর) চোরাচালান বন্ধে ও সংবাদ প্রকাশ করার দায়, চোরাচালানিদের মামলা, হামলার নিরাপত্তা চেয়ে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর স্থানীয় সাংবাদিক সাবজাল হোসেন একটি লিখিত আবেদন করেন।
জানা গেছে, গত এক বছর ধরে জেলার তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট, বড়ছড়া, লাকমা, লালঘাট, বাশঁতলা, চারাগাঁও ও কলাগাঁও সীমান্ত এলাকা দিয়ে ওই চোরাচালান সিন্ডিকেডের সদস্যরা বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ কয়লা বিনাশুল্কে সীমান্তের ওপার থেকে এপারে এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সিন্ডিকেট দলের মুলহোতা বালিয়াঘাট গ্রামের উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁ এর ছেলে আবুল বাসার খান নয়ন, দুধের আউটা গ্রামের লেবু মিয়ার ছেলে মল্লিক মিয়া, তাজুদ আলীর ছেলে শাহাঙ্গীর, মৃত হাসিমের ছেলে শামীম, মিরাশ আলীর ছেলে মোস্তফা, লায়েক মিয়ার ছেলে রতন, লালঘাট গ্রামের জয়নাল মিয়া, জয়নালের ছেলে হাবিবুর, একই গ্রামের লায়েক মিয়ার ছেলে আনোয়ার, লালঘাট গ্রামের আবুল হোসেন।
জানা যায়, আল-ফারুক এন্ড ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজে কয়েক বছর ধরে কয়লা স্টক না থাকলেও তারা আল-ফারুক এন্ড ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ এর ভূয়া চালান পত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে চোরাই কয়লা ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নেত্রকোনা, চামড়াঘাট, মধ্যনগর, কমলাকান্দা ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে। আর এই চোরাচালান নিয়ে জাতীয় দৈনিক সকালের সময়, দৈনিক পুণ্যভূমি, আর এম সি নিউজ, দৈনিক আলোকিত সকাল, দৈনিক ক্রাইম তালাশ, অনলাইন পোর্টাল গ্রামীন নিউজ, সবার কথা, আজকের আলো, রবি নিউজ, জনতার কথা, হ্যালো সুনামগঞ্জ ডটকম সহ বিভিন্ন দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এরপরই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সীমান্তের চোরাচালান বন্ধে তৎপর হয়ে ওঠে। এরপরই স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে তাহিরপুর থানা পুলিশের পৃথক পৃথক অভিযানে একাধিক চোরাই কয়লা বোঝাই নৌকা আটক করে। একাধিক মামলাও হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ নভেম্বর সকালে পুলিশের অভিযানে নয়ন সেন্ডিকেটের আরও একটি চোরাই কয়লা বোঝাই নৌকা আটক হয়। এ নিয়ে দৈনিক সকালের সময়, দৈনিক পুণ্যভূমি, দৈনিক আলোকিত সকাল, ও আর এম সি নিউজ সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ওই নয়ন সিন্ডিকেটের সদস্যরা ২৮ নভেম্বর সুনামগঞ্জ আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে।
দৈনিক সকালের সময়’ প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকার তাহিরপুর উপজেলা প্রতিনিধি সাবজল হোসাইন, দৈনিক আলোকিত সকালের স্টাফ রিপোর্টার আহম্মদ কবির, জাতীয় দৈনিক লাল সবুজের দেশ এর জেলা প্রতিনিধি আবু জাহান সহ আরও দু’জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে। এর বাদী চোরাকারবারে জড়িত মল্লিক মিয়া নামের এক ব্যক্তি। আর মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন চোরাকারবারে জড়িত ব্যক্তিরাই। আর ওই তিন স্বাক্ষী মামলার বিষয়ে কিছুই জানে না বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জেরায় স্বীকার করেছেন। যার কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, আমি শুনেছি এরকম একটি মামলা হয়েছে তবে এখনো আমরা পাইনি। আমার কাছে মামলা আসলে আমি সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন কোর্টে পাঠাবো।