কাকন সরকার, শেরপুর : আজ ৬ জুলাই শনিবার শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহাসিক কাটাখালী যুদ্ধ দিবস। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২ জন শহীদ হন। শহীদ হন একই পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজমুল আহসান, মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেন।
স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সম্প্রতি কাটাখালীতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ব্রিজের পাশে শহীদ নাজমুল পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন কাটাখালী’ যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানি কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট ফিট করে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কাটাখালি ব্রিজ উড়িয়ে দেন। সফল অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যাওয়ায় পাশের রাঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেন মুক্তিযোদ্ধারা। দিনের আলো ফুটে ওঠায় কোথাও বের হওয়া নিরাপদ মনে না করে পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু ওই গ্রামের জালাল মিস্ত্রী পাকিস্তানি বাহিনীর আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর পৌঁছে দেন।
সংবাদ পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৬ জুলাই সকালে রাজাকার, আল-বদরদের সঙ্গে নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রাম তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। ওই গ্রামের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার একমাত্র পথ খোলা ছিল রাঙ্গামাটি বিল। সেটিও পানিতে তখন টইটুম্বুর। এমন অবস্থায় ওই বিলের পানিতে নেমে কভারিং ফায়ার করতে করতে কমান্ডার নাজমুল আহসান মুক্তিযোদ্ধাদের রাঙ্গামাটি বিল সাঁতরে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। সবাই চলে যাওয়ার পর হঠাৎ পাক সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে কমান্ডার নাজমুলের বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়। কমান্ডার নাজমুলের মরদেহ আনতে গিয়ে তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনও শহীদ হন পাকিস্তানিদের গুলিতে।
মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে পাকিস্তানি বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা দেয়। খুঁজে খুঁজে বের করে ৬০ থেকে ৭০ জন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন শহীদ হন। এদের মধ্যে একজন গুলি খেয়েও মৃতের মতো পড়ে থাকেন। মৃত ভেবে হানাদার বাহিনী তাকে ফেলে চলে যায়। পায়ে বিদ্ধ গুলি নিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সেদিনের বিভীষিকা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন রাঙ্গামাটি গ্রামের ইউনুছ আলী। এছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় হানাদার বাহিনী।
দিবস টি উপলক্ষে নাজমুল স্মৃতি পার্কে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
সম্পাদক : মীর দিনার হোসেন (যুগ্ম আহবায়কঃ সর্বস্তরে স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন আন্দোলন), মোবাইল: ০১৫৮১-২৪৪২০০ * প্রধান সম্পাদক : মির্জা গালিব উজ্জ্বল ( সদস্য সচিবঃ সর্বস্তরে স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন আন্দোলন) মোবাইল: ০১৭২৮-৭৭৫৯৯০।
মেইল: bangladeshsokal@gmail.com, web: www.bd-sokal.com
Copyright © 2025 বাংলাদেশ সকাল. All rights reserved.