সবুজ মিয়া (রংপুর) ব্যুরো : মৌসুমী পতাকা বিক্রেতা হিসাবে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে লাল সবুজের পতাকা বিক্রি করার জন্য প্রতিবছরের মত এবারও লালমনিরহাট জেলা থেকে এসেছেন রায়হান। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় রবিবার ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে পুরাতন সোনালী ব্যাংক মোড় রোডে দেখা হলে কথা হয় পতাকা ফেরি করা তরুণ এক যুবকের সাথে।
পেশায় রায়হান একজন কৃষি শ্রমিক। সারা বছর সংসারের কাজকর্ম করলেও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত এই সময়টাতে বাড়তি আয়ের আশায় বিজয় দিবসের পতাকা, মাথায় এবং হাতে বাঁধার ব্যাচ ও বিজয় দিবসের অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করেন। সারা বছর এদের দেখা না মিললেও বিজয়ের মাসে শহর থেকে গ্রামে হাট বাজারে দেখা মেলে ৮/১০ফুট লম্বা বাঁশে বেঁধে বিক্রি করা এসব মৌসুমী পতাকা বিক্রেতাদের। রয়েছে নানা আকারের পতাকা এবং পতাকার লোগো সংবলিত মাথা ও হাতে বাঁধার ব্যান্ড। পতাকার মধ্যে বর্তমান লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন লাল-সবুজের মাঝে হলুদ মানচিত্র আঁকা পতাকা ও ব্যাাচ। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন হাট বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফেরি করে পতাকা বিক্রি করতে দেখা যাবে মৌসুমী এমন অনেক পতাকা বিক্রেতাদের।
পতাকা কেমন বিক্রি হচ্ছে এ নিয়ে রায়হানের সাথে কথা হলে জানান, পূর্বে ভালই বিক্রি হতো কিন্তু এখন অনেকে পতাকা কিনতে চায়না। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মোটরসাইকেল, যানবাহনে বাঁধানো ছোট পতাকা ও জাতীয় পতাকা সম্বলিত মাথায় বাঁধা ব্যাচ বিক্রি তেমন একটা হচ্ছেনা। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, অভিভাবকদের কাছে পতাকা ক্রয়ের প্রবণতা কমে যাচ্ছে দিনকে দিন। শিশু-কিশোর ও প্রবীণরাও এখন ক্রয়ে আর আগ্রহ প্রকাশ করেনা। আগে বিজয়ের মাস আসলেই অনেকেই বাড়ির ছাদে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সামনে এমনকি গাড়িতেও জাতীয় পতাকা ওড়াতো। যার ফলে এ মাসে জাতীয় পতাকার চাহিদা বেড়ে যেতো । মানুষ দর্জির দোকানে গিয়ে পতাকা বানানোর চেয়ে আমাদের ফেরিওয়ালার কাছে সহজেই কিনতো তাদের চাহিদা মত পতাকাসহ অন্যান্য জিনিস। তবে গতবছরের তুলনায় বিক্রি কমলেও এবারে ক্রেতা হিসেবে গত ৫ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনে ভূমিকা পালনকারী তরুণ প্রজন্মের ছাত্র যুবকদের মাঝে প্রবণতা বেড়েছে এবছর তারাই এসব বেশি কিনছেন। এতে কিছুটা হলেও পতাকা তৈরির খরচ উঠছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ৫শ টাকার পতাকা বিক্রি হচ্ছে যা বিগত বছরগুলোতে এক থেকে দের হাজার টাকার অধিক বিক্রি হতো। বিক্রি কম তবুও রায়হান আশা করছেন বছরের এই ১৫ দিনে তার আয় হবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। পতাকা তৈরিতে খরচ বাড়ায় এবছর ৬ ফুটের একটি পতাকা বিক্রি করছেন ২শ ৫০ টাকা থেকে ২শ ৮০ টাকা, ৫ ফুট ১শ টাকা থেকে ১শ ২০ টাকা, সাড়ে ৩ ফুট ৮০ থেকে ১শ টাকা, আড়াই ফুট ৫০থেকে ৭০ টাকা, দেড় ফুট ৩০ টাকা আর ১ ফুট ২০ টাকা এবং ফিতা আর ব্যান্ড বিক্রি করছেন ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। সে জানায়, সবকিছু মিলে বিজয়ের মাসে পতাকা কাঁধে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে তার ভালোই লাগে।
ফেরিওয়ালাদের পতাকা বিক্রি কমে যাওয়া এবং তাদের কাছে পতাকা ক্রয়ে আগ্রহ হারানোর কারণ জানতে স্থানীয়দের সাথে কথা হলে, অনেকে মন্তব্য করেন যে জাতীয় পতাকা গুলো সঠিক মাপ অনুযায়ী তৈরি করা হয় না। ভালো মানের কাপড়ে সঠিক মাপে পতাকা তৈরি করলে এবং দাম হাতের নাগালে রাখলে আগ্রহ বাড়তে পারে এমটাই মত প্রকাশ করেন উপস্থিত ক্রেতারা।
সম্পাদক : মীর দিনার হোসেন (যুগ্ম আহবায়কঃ সর্বস্তরে স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন আন্দোলন), মোবাইল: ০১৫৮১-২৪৪২০০ * প্রধান সম্পাদক : মির্জা গালিব উজ্জ্বল ( সদস্য সচিবঃ সর্বস্তরে স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন আন্দোলন) মোবাইল: ০১৭২৮-৭৭৫৯৯০।
মেইল: bangladeshsokal@gmail.com, web: www.bd-sokal.com
Copyright © 2025 বাংলাদেশ সকাল. All rights reserved.