কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি॥ কক্সবাজার জেলা পর্যটন এলাকা মহেশখালী উপজেলার একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এখানকার অধিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পেশা পান চাষ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এর ভূমি পান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মহশেখালী পৌরসভার গোরকঘাটা লামার (রাখাইন) পাড়া সপ্তাহে দুইদিন সোম ও শুক্রবার পানবাজার বসে আর কক্সবাজারের চকরিয়া, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, পটিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যপারীরা পান সংগ্রহ করে থাকে। পরে ট্রাকবোঝাই করে পাঠিয়ে দেয় দেশে/বিদেশে বিভিন্ন জায়গায়। এসব পাইকারি বাজারে পানের বড় পান প্রতি বিরা (৩০০টি পান) বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। মহেশখালীর পানের বরজ সাধারণত দুই ধরনের পাহাড়ী বরজ এবং বিল বরজ। উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে যুগ যুগ ধরে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পানচাষিরা। জমির শ্রেণি অনুসারে পাহাড়ী এলাকার ভূমিতে পান চাষ দুই/তিন বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ছয় মাস। সমতল জমিতে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে মে/জুনে শেষ হয়।
অপরদিকে পাহাড়ী ঢালু জমিতে পান চাষ হয় বছরের যে কোন সময়। এমনটাই জানান স্থানীয় পানচাষিরা। পান চাষের উপকরণ হলো: ছন, উল, বাঁশ, গোবর দিয়ে তৈরী সার, খৈল ইত্যাদি।
০৪ মার্চ (শনিবার) ছোট মহেশখালীর পান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বরজ থেকে সদ্য ভেঙে আনা থরেথরে পান নিয়ে বসে রয়েছেন অনেক চাষি। পানচাষীরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় মহেশখালীর মিষ্টি পান চাষিদের মুখে হাসির জোয়ার বইছে। বেশি মুনাফা হওয়ায় মহেশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষিরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মহেশখালীর পানচাষী কালা মিয়া বলেন, আমার দুটি পান বরজ রয়েছে। দুটি বরজ থেকে প্রতিসপ্তাহে পান ভেঙ্গে গোরকঘাটা পানবাজারে নিয়ে আসি আর এখানে পাইকারী ব্যপারীদের কাছে বিক্রি করি। আগে বড় পান বিক্রি হতো ১৫০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকায় আর মাঝারি পান বিক্রি হতো ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। ঠিক সেই পান বর্তমান বিক্রি হচ্ছে বড় পান প্রতি বিরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ও মাঝারি পান ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আর ছোট ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এবার পানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি।ছোট মহেশখালীর আরেক পানচাষি হিমাংশু বিকাশ দে (নোনাইয়া) বলেন, পানের বরজ থেকে সারা বছরই পান সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালে তুলনামূলক কম পান উৎপাদন হয়। কারণ শীতকালে পান পাতা বাড়ে কম। এসময় উৎপাদন কম হলেও বাজারে দাম থাকে বেশি। পানচাষ টিকিয়ে রাখতে টিএসপি সারের দাম কমানোসহ পর্যাপ্ত সরবরাহের দাবি জানান।
মহেশখালীর পানের বিশেষত্ব হলো তার মিষ্টি স্বাদ, যার কারণে এই পান চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই মিষ্টি পান সারাদেশে বিখ্যাত। মহেশখালীর মিষ্টি পান শুধু বাংলাদেশে নয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এখানকার পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। কারও কারও মতে আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু দেশও বাদ যায় না। সমগ্র বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ মিষ্টি পান মহেশখালী দ্বীপে উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে উৎপাদিত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পুরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজালী, মহানলী, চেরফুলী, ভাবনা, সন্তোষী, জাইলো, ভাওলা, ঝালি প্রভৃতি জাতের মধ্যে মহেশখালীর মিষ্টি পান উল্লেখযোগ্য।
সম্পাদক : মীর দিনার হোসেন (যুগ্ম আহবায়কঃ সর্বস্তরে স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন আন্দোলন), মোবাইল: ০১৫৮১-২৪৪২০০ * প্রধান সম্পাদক : মির্জা গালিব উজ্জ্বল ( সদস্য সচিবঃ সর্বস্তরে স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন আন্দোলন) মোবাইল: ০১৭২৮-৭৭৫৯৯০।
মেইল: bangladeshsokal@gmail.com, web: www.bd-sokal.com
Copyright © 2025 বাংলাদেশ সকাল. All rights reserved.