নিজস্ব প্রতিবেদক বাবলু মিয়া॥ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের জনগণের পক্ষ থেকে তৈরি ইউএসএআইডি টু বহরমপুর গ্রামের সড়কে ৭ কিলোমিটার রাস্তায় লাগানো ছিল ১২ হাজার গাছ। এখন মাত্র আছে ৪ হাজার গাছ বাকি গুলো চুরি হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, গাছ গুলো কাঁটার জন্য বন বিভাগ কে কয়েকবার জানানো হলেও গাছ গুলো কাটার ব্যবস্থা করেনি। গাছ গুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছু লোক গাছ গুলোর গোড়া কেটে দিচ্ছে। পরে সেগুলো মরে গেলে চুরি করে নেওয়া হচ্ছে।
কুশনা নড়িখালি মাঠ থেকে ইউনিয়ন বোর্ড অফিস পর্যন্ত বহরমপুর গ্রামের মাঠ এবং গ্রামের সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে কারি সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত মোট ৭ কিলোমিটার দূরত্ব রাস্তার ধারে ওই গাছ রয়েছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ মারা গেছে।
গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ২০০২ সালে উপকারভোগীদের আর-বি-কে বনায়ন সমিতি ও কোটচাঁদপুর বন বিভাগ যৌথভাবে গাছ গুলো লাগিয়েছিল। সে সময় ৭ কিলোমিটার রাস্তায় ১২ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়। যার মধ্যে ৬ হাজার ছিল খইয়া বাবলাগাছের চারা। বাকি গুলো অন্যান্য গাছের চারা। গাছ গুলো বড় হওয়ার পর চুরি শুরু হয়।
জয়নাল আবেদিন আরও বলেন, খইয়া বাবলাগাছগুলো বড় হলে গাছের ডালে ও পাতার নিতে অসংখ্য কাঁটা তৈরি হয়। এ কাঁটা পায়ে ফুটলে আর বের হতে চাই না। এ কারণে গাছগুলোর প্রতি এলাকার মানুষের ভালোবাসা নেই। উল্টো গাছগুলো যাতে মারা যায়, সে জন্য গাছের গুড়া কেটে রেখেছে কেউ কেউ।
ওই রাস্তার পাশে চাষের জমি আছে মনিরুল ইসলামের। তিনি বলেন, ওই গাছ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবলাগাছের কাঁটার কারণে জমিতে চাষ করতে পারেন না। তাদের এলাকার অনেক মানুষের পায়ে ওই কাঁটা ফুটেছে। একবার ফুটলে তার কষ্ট সহ্য করা খুবই কঠিন। কৃষকরা মরা গাছের কারণে বছরের পর বছর কষ্ট করে চলেছেন। অনেকে জমিতে চাষ করতে পারছে না। তা ছাড়াও মরা গাছের ডাল ও কাঁটা মাটির রাস্তার উপর পড়ছে।
এ বিষয়ে আর-বি-কে বনায়ন সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন মোল্লা বলেন, সমিতির সদস্য সংখ্যা ৮০, জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা খরজ করে তাঁরা এই গাছ লাগান। এখন পর্যন্ত এক টাকাও পাইনি সদস্যরা। অথচ ১২ হাজার গাছের মধ্যে ৮ হাজারের কোনো হদিস নেই। আম্পান ঝড়ে কিছু গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল। সেগুলো বিক্রি করে ৩৫ হাজার টাকা তাঁরা ব্যাংকে রেখেছে।
তিনি বলেন, এখন যে গাছ আছে বিষাক্ত খইয়া বাবলাগাছ, সেগুলো এলাকার লোকজন মেরে ফেলছেন। কিন্তু তাঁরা প্রতিবাদ করতে পারছে না কারণ গাছগুলো খুবই ক্ষতিকর।
আলতাফ হোসেন মোল্লা আরও বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে গাছগুলো লাগানোর সময় বলা হয়েছিল, ১৫ বছর পর গাছগুলো বিক্রি করা হবে। যার একটি অংশ সদস্যরা পাবেন। কিন্তু ২০ বছর বয়স হলেও বিক্রির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাঁরা ক্ষতিকর ও মরা গাছগুলো বিক্রি করার অনেক আবেদন করছে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
এবিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এ উপজেলায় নতুন এসেছেন বিষয়টি তার বিস্তারিত জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। খইয়া বাবলা গাছে কাঁটা বেশি হয়। এ কাঁটা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ কারণে এখন আর এ গাছ লাগানো হয় না।