বিশেষ প্রতিনিধি : গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া শ্রমিক বিক্ষোভ রাতভর চলেছে। টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা মহাসড়কে অবস্থান করছেন শ্রমিকরা। এ কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে টঙ্গি থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েবকেয়া বেতনের দাবিতে আজ রবিবার (১০ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা। তাদের দাবি বেতন ছাড়া মহাসড়ক ছাড়বেন না। অপরদিকে, নিরাপত্তা ও অন্যান্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গাজীপুরের ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, টিএনজেড অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা গতকাল (শনিবার) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান করছেন। তাদের একটাই দাবি, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা মহাসড়ক ছাড়বেন না।
তিনি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনসহ মালিককের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের একাধিকবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সর্বশেষ তাদের (শ্রমিকদের) বেতন পরিশোধ করার কথা বলা হয়। মালিকপক্ষকে একাধিকবার সময় দেওয়া হয়েছিল, তারা বার বার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। তাই শ্রমিকরা এখন আর কারো কথা বিশ্বাস করে না।
পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা কোন মুখে তাদেরকে বলব, যে তোমাদের ব্যবস্থা করে দেবো; তোমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করো। শ্রমিকদের মতই মালিকের প্রতি আমাদেরও আস্থা নেই। তবে আমরা তাদের [শ্রমিকদের] একাধিকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিসে এসে বসো, অবস্থান নাও। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা মহাসড়ক ছাড়বে না। গতকাল সন্ধ্যায়ও তাদেরকে বুঝোনো হয়েছে, রাতেও চেষ্টা করেছিলাম, তারা মহাসড়ক ছাড়েনি। এই ধারাবাহিকতায় টিএনজেড গ্রুপ,কলম্বিয়া, ভোগড়া বাইপাস, চৌরাস্তায় এদিকে যে কয়টি কারখানার আছে তারা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকরা ভেতরে ঢুকতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও চেষ্টা করছি। একটু আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এসেছিল, আমরাসহ কথা বলেছি। আশা করি এটার সমাধান হবে। আমাদের সিনিয়র স্যাররা আছেন, বিজিএমইএ, শ্রম অধিদপ্তরও এটা নিয়ে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির মালিক দুইজন। বর্তমানে একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যিনি দেশে আছেন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি মন্ত্রণালয়ে আছেন। সেখানে এক্সপোর্ট বিল্ড আপ ফান্ডে ওনার কিছু টাকা আছে। উনি চাচ্ছেন এই ১১-১২ কোটি টাকা যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলে উনি এই দুই মাসের বেতনের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। জরুরি মুহূর্তে তার ১১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকার দরকার বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন।’
মহাসড়কের ওপর কেন এত ক্ষোভ? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার ধারণা, ওরা মনে করে মহাসড়ক বন্ধ করতে পারলে মালিকের ওপর চাপ আসে, টাকার ব্যবস্থা করতে হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে রোববার সকালে লাঠিসোঁটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছে।
শ্রমিকদের অবরোধের জায়গার উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে আটকা পড়া যানবাহনের মধ্যে বেশিরভাগই পণ্য পরিবহন ও যাত্রীবাহী গাড়ি। এসব গাড়ি গত রাতে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে যানজটে আটকা পড়ায় আর কোনো দিকে যেতে পারেনি। আটকে পড়া পণ্যবাহী যানবাহনের মধ্যে পচনশীল পণ্যও রয়েছে। সম্মানিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীবৃন্দের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে, বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গার্মেন্টসের শ্রমিকগণ কর্তৃক ভোগড়া বাইপাস ও মালেকের বাড়ির মাঝামাঝি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে গতকাল সকালে শুরু করা মহাসড়ক অবরোধ এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। বিধায়, সম্মানিত যাত্রীগণকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
যানজটের দুর্ভোগ এড়াতে মহানগর পুলিশ বিকল্প পথ বলতে আসলে কোন পথ ব্যবহারের কথা বলেছেন, এ নিয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন।
মহানগর পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে টঙ্গি পর্যন্ত সড়কের বিকল্প হিসেবে বেশ কয়েকটি সড়ক ও উপসড়ক রয়েছে।
ময়মনসিংহ থেকে বা টাঙ্গাইল থেকে যে গাড়িগুলো আসছে সেগুলোকে আমরা ভোগড়া থেকে ডাইভারশন দিচ্ছি। ঢাকা বাইপাস হয়ে, কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে বা তিনশ’ ফিট হয়ে যাতে ঢাকায় যেতে পারে।
অপরদিকে, ঢাকা থেকে যেগুলো ময়মনসিংহমুখী গাড়িগুলোকে টঙ্গি স্টেশন রোড হয়ে মিরের বাজার হয়ে ওদিক দিয়ে ঢাকা বাইপাস হয়ে তারা আসতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, যে সকল যাত্রী টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা যাচ্ছেন অথবা ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের মধ্যে পথে যাত্রা করছেন তারা চাইলে, গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণপ্রান্তে তুরাগ নদীর দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত টঙ্গি- আশুলিয়া চন্দ্র সড়ক ব্যবহার করতে পারেন। এ সড়ক দিয়ে সহজেই টাঙ্গাইলে এলাকার মানুষজন ঢাকায় যাতায়াত করতে পারেন। এছাড়া ময়মনসিংহ এলাকার লোকজন, গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর রেলস্টেশন পার হয়ে ধীরাশ্রম-বনমালা হয়ে টঙ্গি স্টেশন রোড এলাকায় দিয়ে বের হয়ে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে যুক্ত হতে পারেন।
তবে, জয়দেবপুর- ধীরাশ্রম-বনমালা সড়কটি সরু হওয়ায় বড় বড় যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন গুলো জয়দেবপুর রাজবাড়ি রোড দিয়ে ধীরাশ্রম অতিক্রম করে বাইপাস আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে পূবাইল হয়ে ৩০০ ফিট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারেন।
এছাড়াও যাত্রী সাধারণ চাইলে, জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে ঢাকা আসা-যাওয়া করতে পারেন।