ড. মহসিন আলী, নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র): গণমিলন নামে এক এনজিও আমি ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে শুরু করি স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পূণর্গঠনমূলক কাজ করার জন্য। তখন শুধু স্যার ফজলে হাসান আবেদ ভাইয়ের BRAC ও ডাঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরী ভাইয়ের গণস্বাস্থ কেন্দ্র কাজ করতেন দেশি এনজিও হিসেবে। গ্রামীন ব্যাংক, প্রশিকা ও গণ উন্নয়ন প্রচেষ্টা অনেক পরে কাজ শুরু করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সময় আমার বয়স ১৯ বছর ছিল এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষের অর্থনীতির অনার্সের ছাত্র ছিলাম । ভারতের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহন করে বর্তমানের নাটোর জেলার আমার জন্ম স্থান গুরুদাসপুর থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে চলনবিল এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করি।
স্বাধীনতার পরে আমি ১৯৭২ সালের ৩১ শে জানুয়ারীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কাছে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে অস্ত্র জমা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পূণর্গঠনমূলক কাজ করার জন্য গুরুদাসপুরে গণমিলন নামে এনজিও প্রতিষ্ঠা করি আমার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে।
স্বাধীনতার পর আমিই প্রথম তেভাগা খামার, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প, গরীবদের কর্মসংস্থান ও গণশিক্ষা কর্মসূচী শুরু করি । বিবিসি লন্ডন থেকে একদল ফিল্ম ক্রিউ নিয়ে এসে ইয়র্ক শায়্যার ফিল্ম কোম্পানীর মাধ্যমে ও এ্যানথনি মায়্যারের পরিচালনায় ও নির্দেশনায় এবং পশ্চিম বাংলার সত্যজিৎ রায়ের একজন সহযোগী তপন ব্যানার্জীর সহযোগীতায় ও রিচার্ড টেইলরের তত্বাবধানে আমার মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন ও স্বাধীনতার পর দেশ পূণর্গঠনমূলক কার্য্যক্রমের উপর ৫০ মিনিটের একটা প্রামাণ্য চিত্র তৈরী করে ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে ও ১৯৭৩ সালের জানুয়ারী মাসে যেটা ১৯৭৪ সালের ১লা এপ্রিল বিবিসি টেলিভিশনে ও ১৯৭৩ সালের ৪ঠা মে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রদর্শিত হয়েছিল ।
ড. ইউনুস স্যার ১৯৭২ সালে তার চিটাগাং বিশ্বিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকদের আমার গণমিলন প্রোজেক্টে গুরুদাসপুরে পাঠিয়ে আমার ক্ষুদ্র ঋণ ও অন্যান্য কর্মসূচী সম্পর্কে বাসিতবে গভীরভাবে জেনে নেন ও আমাকে বহুবার তার প্রোজেক্টে আমন্ত্রন করে নিয়ে যেয়ে হাতে নাতে তার প্রোজেক্টের কাজ শুরু করিয়ে নেন ও পরামর্শ নেন। এ বিষয়ে ড. ইউনুস স্যার কে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ড. ইউনুস স্যার জীবিত আছেন ।
১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্টে কিছু সামরিক কর্মকর্তা কর্তৃক জাতির পিতা ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যার করা হলে আমি জিয়া ও মোস্তাক সরকারের বিরুদ্ধে আমার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আবার যুদ্ধে নামি তখনকার লক্ষ লক্ষ ডলারের এনজিও প্রোজেক্ট ছেড়ে দিয়ে ।
প্রায় ৩ মাস চলনবিল এলাকায় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে আমি পুলিশের হাতে ধরা পরি । আমাকে বন্দি করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং এক মাস এসবি অফিসে রিমান্ডে রেখে আমাকে অমানসিক নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় । আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ অন্যান্য কারাগারে প্রায় ২৬ মাস কারাবরণ করি ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। তখন আমার এনজিও গণমিলনকে সরকারিভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। চলবে….