ইমাম হাছাইন পিন্টু নাটোর॥ নাটোরের গুরুদাসপুরসহ চলনবিলাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। ফসলের মাঠগুলোতে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে বিরাজ করছে থোকা থোকা হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য। শীতের হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সুবাশ। মধু আহরণে ফুলে ফুলে বসছে মৌমাছি। দুচোখ যেদিকে যায় শুধু হলুদ আর সবুজের সমারোহ। যেন এক টুকরো মিনি বাংলাদেশ। গাড়ো সবুজের বুকে হলুদের ছিটা। সেই সরিষার হলুদ ফুলে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ধরে রাখতে ছবি তুলছেন কোমলমতি শিশুসহ সকল বয়সী নারী ও পুরুষ। এদিকে সোনার ফসল ঘরে তুলতে আশায় বুক বেধেঁ আছে চলনবিলের কৃষকরা।
সরেজমিন চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, চলনবিলের মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। যে দিকে তাকানো যায় চারদিকে শুধুই হলুদের সমারোহ। দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতির এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে যে কোন মানুষই মুগ্ধ না হয়ে পারে না। হলুদ ফুলের সুসজ্জিত মাঠে ভ্রমর পাখা মেলে উড়ছে। ভ্রমরের গুঞ্জন ফসলের অপরুপ দৃশ্যে কৃষক, মৌয়াল আর ভ্রুমণ পিঁপাসুদের মনে প্রশান্তির ছাঁয়া। একদিকে সরিষার এই ফুল থেকে প্রতি বছর মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষীরা। শুধু তাই নয় সরিষা ফুলের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ
চলনবিলের সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বগুড়া থেকে আসা মুক্তি, ঢাকা বিমান বন্দর এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস ফেন্সী ও টুম্পা নয়া শতাব্দীকে জানান, বর্ষা মৌসুমে একবার এসেছিলাম পানির সৌন্দর্য্য দেখতে। শুকনো মৌসুমে সরিষা ফুলের হলুদে মেতে থাকা সৌন্দর্য্যরে কথা শুনেই আবার চলে আসলাম। তবে অনেক ভাল লেগেছে। সময় পেলে পুরো চলনবিলটাই ঘুড়ে দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মন না চাইলেও সময়ের টানে ফিরে যেতে হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা গ্রামের একাধিক কৃষক গণমাধ্যম কে জানান, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো ফলন হলে বিঘাতে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা হয়। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ১৮ হাজার টাকা। এছাড়াও পারিবারিক চাহিদা যেমন তৈল, গরুর খৈইল, জালানীও পাওয়া যায়। একারণে বোরো ধানের আগে সরিষার আবাদ করে নেই। এই টাকাতেই ধানের অর্ধেক খরচ উঠে আছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ গনমাধ্যমকে জানান, সরিষার আবাদের পরই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। অল্পসময়ে ২টি ফসল ঘরে ওঠে বলে কৃষকের শরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তিনি জানান, এবছর উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে ৯শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে। তবে এবছর দ্রুত বিলের পানি নামায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক চাষ হয়েছে।
গুরুদাসপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় গনমাধ্যমকে জানান, চলনবিল বছর জুড়েই তার চিরোচেনা নানা রুপ আর সৌর্ন্দয্য দিয়ে বিভিন্ন সময় নানা রুপে পর্যটকদের কাছে টানে। চলনবিলের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য না দেখলে চলনবিলের অপার সৌন্দর্যটাই যেন অধরা থেকে যায়।