দেবহাটা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন॥ দেবহাটা উপজেলার প্রতিটি মাঠে হলুদ ফুলে ভরে গেছে সরিষা ক্ষেত। ক্ষেতের পর ক্ষেত হলুদের সমারোহ। সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জনে কৃষকের মন আলোড়িত হচ্ছে। মধু আহরনে মৌমাছিরা মেতে উঠেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হলুদের সমারোহ দেখে চোখ জুড়ে যায়। আবহাওয়া খারাপ, বৃষ্টি ও কুয়াশা থাকায় সরিষার আবাদ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তারপরও উপজেলার উর্বর জমিতে এ বছর আশানারুপ সরিষা উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশা করছে। সেই সাথে কৃষি অধিদপ্তরও লক্ষ মাত্রা ছাড়িয়ে সরিষার আশানুরুপ ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।প্রতিটি ক্ষেতে তরতাজা সবুজ সরিষা গাছাগুলোতে হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
এ বছর যা আবাদ হয়েছে তাতে সরিষা চাষে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আংশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি সঠিক দাম পাওয়ার আশায় বুক বেধেছে এলাকার কৃৃষকরা। শীতের শুরুর আগে কৃষকরা শত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে চাষের উপযোগী জমি প্রস্তুত করেন। চাষের জমিতে বার বার চাষ দিয়ে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে পরিমিত বীজ বপন করেন কৃষক। কদিন যেতে রোপনকৃত বীজ হতে চারা গজাতে শুরু করে সবুজ গাছ। গজানো চারা দিনদিন বাড়তে শুরু করে। দেশের তেলের চাহিদা মেটাতে এবং ফসল বিক্রয় করে ভালো দাম পাওয়ায় দিনদিন সরিষা চাষে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক।
বর্তমানে সরিষা তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও তেলের দাম বৃদ্ধির কারনে কৃষকরা সরিষা চাষে অধিক লাভবান হবেন এ প্রত্যাশায় এবছর উপজেলাজুড়ে সকল ফসলী ক্ষেতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ফলে দেবহাটায় প্রতি বছর বাড়ছে সরিষা চাষ। দেবহাটার সখিপুর মোড় থেকে উপজেলা সড়কের দিকে এগুতে থাকলে মাঠ জুড়ে দেখা মিলবে হলদে ফুলের সমাহার। মাঠ জুড়ে শুধু সরিষা ফুলের রাজ্য চোখে পড়বে। গাছে গাছে হাজারো মৌমাছি গান গেয়ে মধু সংগ্রহ করছে। আর অন্যদিকে কৃষক ফসল পরিচর্চায় সময় পার করছেন।
দেবহাটা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র মতে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে ১০৭৫ হেক্টর। সরিষা চাষী মোবারক আলী জানান, তার ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর ফলন বেশি হওয়ার আশা করছেন বলে তিনি জানান। সরিষা চাষ শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই বলে তিনি জানান তবে প্রকৃতি যদি অনুকূলে থাকে তাহলে ফলন ভাল হবে বলে তিনি জানান। বর্তমান বাজারে তেলের দাম বাড়তি হওয়ায় সরিষা চাষ করে লাভের আশা করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর জানান, উপজেলার বিভিন্ন মাঠ এখন সরিষা চাষের দখলে। সরিষার সাথে উৎপাদিত হচ্ছে সরিষা ফুলের মধু। আর তাই কুলিয়া, পারুলিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতের পাশে ২৩০ টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন মৌ খামারীরা। সরিষা খেতে মধু উৎপাদন করলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন বেশি হয়, এতে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বলে তিনি উল্লেখ করে জানান, এবছর প্রান্তিক চাষীদের মাঝে বিঘা প্রতি ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি DAP, ১০ কেজি MOP দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূল আছে, তাই বাম্পার ফলনে আশাবাদী বলে কৃষি অফিসার জানান। এবছর ১২০০ টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।