ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম॥ চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের পশ্চিম চর বরমা এলাকার কৃষক জামাল হোসেনের মেয়ে মুনমুন আক্তার। এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এসএসসি) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বরকল এসজেড উচ্চ বিদ্যালয়ের থেকে এসএসসির গণ্ডি পেরুনো এই শিক্ষার্থী হতে চায় চিকিৎসক। পড়তে চায় ভালো কলেজে। তবে কৃষক বাবার পক্ষে কি সম্ভব!
এসব ভেবে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার বরমা ইউনিয়নে পশ্চিম চর বরমা এলাকায় মুনমুন আক্তারদের বাড়িতে গিয়ে তার হাতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বই সহ আনুসাঙ্গিক সামগ্রী এবং কলেজে ভর্তির যাবতীয় খরচপত্র হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দেন। শিক্ষা উপকরণ ও কলেজে ভর্তির জন্য নগদ অর্থ পেয়ে দারুন খুশি মেধাবী ছাত্রী মুনমুন আক্তার ও তাঁর পরিবার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম টিটু, চন্দনাইশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবিদুর রহমান বাবুল, সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আলম, চন্দনাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইখতিয়ার হোসেন, সমাজসেবক মোঃ হাছান খাঁন, মোঃ আমজাদ হোসেন সহ সাংবাদিকবৃন্দ।
ভর্তি ও লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তায় কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শিক্ষার্থী মুনমুন আকতার বলেন, আমি কখনো ভাবিনি একজন পুলিশ অফিসার আমার লেখাপড়ার খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন, স্যার খুব ভালো মানুষ। আমি যাতে ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারি তার জন্য ওসি স্যার অনেক সহযোগিতা করেছেন। এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পর কলেজে ভর্তির জন্য নগদ অর্থ ও বইসহ শিক্ষা উপকরণ প্রদান করায় স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমি লেখাপড়া শিখে সমাজে মানুষের মত মানুষ হতে চাই। আমার মতো যারা অসহায় আমিও একটা সময় যেনো তাদের পাশে থাকতে পারি। আমি সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।
চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। তখন তাদের পারিবারিক জায়গা জমি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে একটা সমস্যা হয়। সমস্যার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি মুনমুন মেয়েটি খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। মেয়েটা যাতে ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে, পড়ালেখায় যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সে তার অধ্যাবসায় দিয়ে পরিবারের সহযোগিতা এবং নিজের প্রচেষ্টা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। অজপাড়াগাঁয়ের একটি মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে তার পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতেও যাতে সে ভালোভাবে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছি। শিক্ষার্থীদের শারিরীক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরন দরকার। এছাড়াও ইভটিজিং, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাল্য বিয়ে ও সামাজিক সমস্যা দূর করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন রয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবহেলিত শিক্ষার্থীরা যেন ভালোভাবে লেখাপড়া ও খেলাধুলা করতে পারে এ জন্য আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সকল প্রকার সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
বরমা ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম টিটু বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী মুনমুন আক্তার যাতে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে এ জন্য আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সকল প্রকার সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
বরকল এসজেড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, মুনমুন মেয়েটা খুবই মেধাবী। সে জেএসসি পরীক্ষাতে ৪.৮৬ পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেছে। কোচিং কিংবা প্রাইভেট না পড়েও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষাতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে সে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে।
আর্থিক সাহায্য, শুভকামনা এবং দোয়া পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে মুনমুন আক্তারের পিতা কৃষক জামাল হোসেন চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি নামাজ পড়ে এই ভালো মানুষটির জন্য আজীবন দোয়া করবো।