রিফাত আরেফিন : ডিবির হাতে আটক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেককে যশোর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ মামলায় চালান দেয়া হলে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত।
তাকেসহ জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ মামলায় একে একে আওয়ামী লীগের ২০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন অনেকে।
এদিকে ওই মামলায় যশোরের বারান্দীপাড়ার যশোর পৌর আওয়ামীলীগ নেতা জাকির হোসেন রাজিব আদালতে আত্মমর্পণ করেছেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। যদিও ওই দুই নেতাসহ অন্য আটককৃতদের স্বজনেরা জানিয়েছেন ঘটনার দিন তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
১২ নভেম্বর রাত ৯ টার দিকে হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির সদস্যরা আটক করেন পোস্ট অফিস পাড়ার বাসিন্দা ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেককে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং তিনি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নন বলে পরিবারের পক্ষে বলা হলেও আটকের পর ডিবি জানায়, গত ৪ আগস্ট যশোর জেলা বিএনপি অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ আরো কয়েকটি ঘটনায় তিনি জড়িত বলে তথ্য আছে। ওই মামলায় যশোরের অনেকের নাম উল্লেখসহ অনেক অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন। আর ওই অগ্নিসংযোগ মামলায় আটক দেখিয়ে চালান দেয়ার ইঙ্গিত দেন গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম হাওলাদার। আর একদিন পর ১৩ নভেম্বর দুপুরে আব্দুল খালেককে বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ মামলায় আদালতে চালান দেয়া হলে জামিন না মঞ্জুর করে ওই দিনই জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে এদিন আদালতে আত্নসমর্পণ করলে যশোর পৌর আওয়ামীলীগ নেতা বারান্দীপাড়ার জাকির হোসেন রাজিবকেও জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর রাতে যশোর শহর ও শহরতলীতে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী ঘরানার ৫ জনকে আটক করে যশোর পুলিশ। ওই দিন যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি ও থানা পুলিশের যৌথ টিমের অভিযান চলে যশোর শহর ও শহরতলীতে। এসময় আটক করা হয় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পুরাতন কসবার শেখ আতিকুর বাবু ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক পুরাতন কসবার শেখ রফিকুল ইসলাম, একই ঘরানার বোলপুরের আব্দুস সালাম (৫৪), আরএন রোডের আশরাফুল কবির বিল্লাল ও সিটি কলেজ পাড়ার শাহ্ আলম। ২৩ অক্টোবর তাদের আদালতে চালান দেয়া হলে জামিন না মঞ্জুর হয়। তাদেরকেও জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ১ অক্টোবর রাতে যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতা কর্মীর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। ওই রাতে আওয়ামী ঘরানার ১৩ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। আর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ মামলায় ২ অক্টোবর তাদের চালান দেয়া হয়। তাদেরও জামিন না মঞ্জুর হয়।
যদিও বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তা অস্বীকার করেছেন আটককৃত আওয়ামী ঘরানার নেতা কর্মীদের স্বজনেরা। তারা জানিয়েছেন ঘটনার দিন তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
যশোর জেলা পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট মামলায় আওয়ামী ঘরানার নেতা কর্মীদের আটক করা হয়েছে এবং আটক অভিযান চলমান রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণ করে জীবন নাশের চেষ্টাসহ সম্পত্তি বিনষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তারেক নাহিয়ান জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সংঘবদ্ধরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৪ আগস্ট বিকেল অনুমান ৫ টায় শহরের আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে থেকে এসে লালদীঘির পশ্চিম পাড়ের বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুর ও লুটপাটের উদ্দেশ্যে আক্রমন করে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা অর্থ যোগান দিয়েছে আবার কেউ কেউ এই আক্রমনে পরামর্শও দিয়েছে। ওই মামলার পলাতক অন্য আসামিদেরকেও আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।