যশোর প্রতিনিধি॥ যশোরে শীতের তীব্রতা বাড়ছে, আজ ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রবাদ আছে পৌষের শীত মহিষের গায়ে। যশোরে শীত প্রকোট আকার ধারণ করেছে। যশোর অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রা তীব্র শীতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সকাল হচ্ছে ঠিকই। তবে বেলা সাড়ে ১০ টার পর সূর্যের দেখা মিলছে মাঝে মধ্যে। তবে সূর্যের তীব্রতা এমন পর্যায় পৌছেছে যেন মানব দেহ গরম অনুভূতি মিলছেনা।
ইংরেজী ৬ জানুয়ারী শুক্রবার বাংলা ২২ পৌষ। শুক্রবার-শনিবার সকাল থেকে শৈত্য প্রবাহ জন জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজের সন্ধানে সকাল থেকে শীতকে উপেক্ষা করে বের হয়ে আসলেও অনেকের ভাগ্যে কাজ জোটেনি। যার ফলে খেটে খাওয়া মানুষের চোখে মুখে দেখা গেছে দুঃখের ছায়া। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন শৈত্য প্রবাহ আরো দুই একদিন থাকতে পারে। এ খবরে খেটে খাওয়া মানুষের চোখে শর্ষের ফুল দেখার মতো অবস্থা দাঁড়িছে।তার কারণ দিন মুজুর থেকে নিন্ম শ্রেনীর মানুষের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩ থেকে ৮ জন। পরিবারের সদস্যদের পেট ভরাতে বাড়ির প্রধানকে সকাল থেকে কাজে বেরিয়ে আসা ছাড়া তদের আর কোন উপায় নেই। তারপর তীব্র শীতের কারনে কাজের গতি কমে যাওয়ায় তাদের চোখে মুখে কান্না আর দুঃখ ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা।
খোঁজ খবর নিয়ে আরো জানা গেছে, গত তিনদিন যাবত শৈত্য প্রবাহ যশোর অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়ায় ষাটার্ধো ও ১৫ বছরের নীচে শিশু কিশোররা শীত বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল গুলোতে ভীড় করছে। বয়স্ক ও শিশু ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ অমাশয়, ডায়রিয়া জনিতসহ বিভিন্ন শীত বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হচ্ছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, গত তিন দিনে হাসপাতালের মেডিসিন, ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে বিভিন্ন শীত বাহিত রোগে ৫শতাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন শীত বাহিত রোগে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলিতে ভর্তি হয়েছে কয়েক হাজার নারীপুরুষ ও শিশু।
যশোর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, তীব্র শীত ও ঘন কূয়াশায় সড়ক গুলিতে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। দিন মুজুর ও খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজে সন্ধানে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরলেও কাজের কোন সন্ধান পাচ্ছেনা। শৈত্য প্রবাহর ফলে অতি প্রয়োজন ছাড়া বিভিন্ন পেশার মানুষ দুপুর ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেনা।
শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা খাবার হোটেল ও মুদী দোকানগুলিতে আগের মতো বেচাকেনা হচ্ছেনা। যার ফলে কেনাবেচায় মন্দা ভাব দেখা দেওয়ায় খাবার হোটেলগুলিতে যে পরিমান বিনিয়োগ করছে সে পরিমান বেচাকেনা না হওয়ায় লোকসান গুলছে হোটেল মালিকেরা। যশোর এলাকায় গরীব, দুঃখী ও নিন্ম আয়ের মানুষের কাছে দাঁড়ানোর মতো তেমন কোন সংগঠনের কার্যক্রমন চোখে পড়েনি গত তিন দিন যাবত। শীত থেকে রক্ষার জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ তেমন একটা চোখে পড়েনি যশোর শহর ও শহরতলীর কোথাও। অথচ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এনজিও গরীব,দুঃখী ও অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছে। যশোরের কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৬ জানুয়ারী শুক্রবার পর্যন্ত শীতবন্ত্র বিতরণের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। রাত হলে খেটে খাওয়া গরীব অসহায় বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ শীত নিবারনের জন্য বিভিন্নস্থানে টায়ার ও বিভিন্ন কাঠ পুড়িয়ে আগুন জ্বালীয়ে তাপ পোহাতে দেখা গেছে। প্রতিদিন গরীব,অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষেরা শীতবস্ত্র সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানগুলিতে খোঁজখবর নিচ্ছে।
এখন গরীব অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র শীত রক্ষার জন্য আগুন জ্বালানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তারা প্রকৃতির উপর তাদের ভাগ্য ছেড়ে দিয়ে দিন গুনছে কবে শীতকাল চির বিদায় নিবে।
যশোরের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দাবী যদি শীতের মধ্যে কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শীতবস্র বিতারন করেন তাহলে গরিবের শীত নিবারনে কিছুটা উপকৃত হবে।