রংপুর ব্যুরো :
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় শারমিন আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে পরিবারের দাবি তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।এমন অভিযোগ করেছেন নিহতের বাবা আউয়াল মিয়া।শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত১০:৩০ টার দিকে উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের জয়দেব মধ্যপাড়া এলাকায় তার স্বামী মুশফিকুর রহমান সোহাগ এর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এজাহার ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ২ বছর আগে উপজেলার পশ্চিম চেংমারী গ্রামের আউয়াল হোসেনের মেয়ে মোসা: শারমিন আক্তার এবং গজঘণ্টা ইউনিয়নের মাহবুবর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান সোহাগের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ-বিবাদ লেগেই থাকত। একপর্যায়ে বছর যেতে না যেতেই যৌতুকের জন্য তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যা এক পর্যায়ে কোর্ড পর্যন্ত গড়ায় এ বিষয়ে রংপুর বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারার বিধান মোতাবেক সিআর মোকাদ্দমা নং-৩৪১/ ২০২৩ দায়ের করা হয়। মামলা আদালতে থাকাকালীন স্বামী সোহাগ মিয়া ভুল স্বীকার করে শারীরিক নির্যাতন করবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ৩ মাস পূর্বে ১১ মাস পর বাবার বাড়ি থেকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তারা আবার সংসার শুরু করেন।
নিহতের পিতা জানান, নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর আবারো তার উপর পূর্বের ন্যায় শারীরিক মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখে। গত কয়েক দিন ধরে আবারো ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য তাকে চাপ দিতে থাকে। গত ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে ০১৮৭৫৪৩৯০৫৪ নাম্বার থেকে নিহতের পিতার মোবাইল ০১৮২২৫৪৩৯৮২ নাম্বারে ফোন দিয়ে যৌতুকের টাকা দাবী করেন, না দিলে মেয়েকে হত্যার হুমকি দেন মেয়ের স্বামী মুশফিকুর রহমান সোহাগ। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাত্রী (স্থানীয় সুত্রে) প্রতিবেশীরা ১২:৫৪ মিনিটে তাকে স্বামীর বসত ঘরের শয়ন কক্ষের তিরের (বাঁশের কাটামোর) সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় গলায় ওড়না পেঁচানো ফাঁস অবস্থায় দেখতে পায়। খবর শুনে সেখানে নিহতের পিতা ও লোকজন পৌঁছে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ০৩:৩০ ঘটিকার সময় লাশ ফাঁসি থেকে নামিয়ে উদ্ধার করেন।
নিহতের বড় বোন আরফিনা (২৩) দাবি করে বলেন, ওমরায় আমার বোনকে মারি ফেলছে। পরে তার দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। একই দাবি করে নিহতের চাচাতো ভাই সেলিম মিয়া (৩০) জানান, রাত আনুমানিক ১ টার সময় আমরা গিয়ে দেখি লাশের ফাঁসি দেয়া ঘরের দরজা খোলা। আমরা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দেখি আমার বোনের দেহ ঝুলে আছে। আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের জ্যাটো আবদার রহমান (৬০) জানান, ঘটনা শুনে আমরা সেখানে গিয়ে স্বামী সোহাগ মিয়া তার মায়ের ঘরে শুয়ে আছে। সোহাগ কিংবা তার পরিবারের কাউকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর পাইনি। আমাদের ধারনা শারমিনের স্বামী, শ্বাশুড়ি ও শশুর বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। এদিকে রাতেই নিহতের স্বামী মুশফিকুর রহিম সোহাগকে নিজ হেফাজতে নিয়ে আটক করেছে থানা পুলিশ। সর্বশেষ সংবাদ লেখা অবস্থায় পাওয়া খবর নিহতের পিতা আউয়াল হোসেন বাদি হয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন।
এবিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আল এমরান জানান, মেয়ের বাবার দাখিলকৃত এজাহার পেয়েছি, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে।এজাহারভুক্ত আসামী হিসেবে স্বামীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।