এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ: নারায়ণগঞ্জ সংদেশ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ জেলার উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সর্বশেষ সভায় সকল সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া সভাপতিত্বাধীন এই সভায় হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতা নিরসন, মাছ চাষ উন্নয়ন এবং কৃষকদের সহায়তা পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় অবৈধ ব্রিজ ভাঙার সিদ্ধান্তসহ খালগুলোকে মাছ চাষের উপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
সভাটি ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ (রবিবার) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় আয়োজিত এই সভায় জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ড. এ. এফ. এম. মশিউর রহমান, ডিডি স্থানীয় সরকার বিভাগ মোঃ সোহেল রানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানিজ ফারজানা শান্তা, জেলা আনসার কমান্ডার নাইমা ইসলাম, জেলা পরিষদ ও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, কৃষি অফিসার, ডিডি সমাজসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা, ডেপুটি জেলা শিক্ষা অফিসারসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভায় হাসপাতালগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধীদের সেবা ও সাহায্য, ভোটার তালিকার হালনাগাদকরণ, সার্বজনীন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, মৎস্য চাষে সকলের আগ্রহ জাগানো এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ ভূমিকা পালনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও, সভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল জেলা প্রশাসকের বক্তব্য।
জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া সভায় বলেন, “আমরা নতুন একটা সমাজ ব্যবস্থা চালু করতে চাই, যেখানে সবাই হবেন মানবিক। দেশের ও সমাজের প্রতি সবার দায়িত্ববোধ থাকতে হবে এবং যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।” তিনি সকল কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা যাতে আমরা খুব সহজেই দিতে পারি, এতে কোনো প্রকার তালবাহানা চলবে না। আমাদেরকে সৎ হতে হবে, মানবিক হতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতি, সমাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রসঙ্গ উঠলে জেলা প্রশাসক এলজিইডি (লোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট)-কে নির্দেশ দেন, ডিএনডি খালের ভিতরে অবৈধ ব্রিজগুলোর পরিসংখ্যান এক সপ্তাহের মধ্যে প্রেরণ করতে। তিনি বলেন, “অতিরিক্ত ব্রিজের কারণে ময়লা বিভিন্ন জায়গায় আটকে যাচ্ছে, এজন্য অবৈধ ও নিষ্প্রয়োজন ব্রিজগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।” এলজিইডির এক মাস সময়ের অনুরোধে জেলা প্রশাসক জোর দিয়ে বলেন, “এক সপ্তাহের বেশি সময় দেওয়া যাবে না।”
এছাড়া, সিটি কর্পোরেশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি নির্দেশ দেন, “আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কোথায় কোথায় মাছ চাষ করা যাবে, সে সমস্ত জায়গা পরিপূর্ণভাবে মাছ চাষের উপযোগী করে আমাকে রিপোর্ট দিন। আমি এই খালের ভিতরে মাছ চাষের ব্যবস্থা করব।” সিদ্ধান্ত হিসেবে খালগুলো পরিষ্কার করে মাছ চাষের উপযোগী করতে হবে বলে ঘোষণা করা হয়। অবৈধ ব্রিজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে।
কৃষি খাতের উন্নয়ন নিয়েও জেলা প্রশাসক বিশেষ নির্দেশ দেন। নতুন কৃষি অফিসারকে বলেন, “এই এলাকার প্রতিটা কৃষককে সঠিকভাবে সার, ওষুধ, বীজ প্রদান করবেন। কোনো প্রকার দুর্নীতির সাথে জড়াবেন না। যেখানে ধান চাষ করা যাবে, সেখানে ধান; সবজি চাষের জায়গায় সবজি। কৃষকদের সঠিক সার, বীজ ও কীটনাশক প্রদান করতে হবে।” এছাড়া, আড়াইখালা ও সোনারগাঁও থানায় ২টি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের ঘোষণা করা হয়।
সভায় সকল দপ্তরের কর্তৃপক্ষদের উদ্দেশ্য করে জেলা প্রশাসক শেষবারের মতো অনুরোধ জানান, “যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ দিয়ে কাজ করতে হবে।” এই সভা নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় উন্নয়নের নতুন গতি সঞ্চার করার প্রতীক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যা জনগণের সেবায় আরও দক্ষতা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
