আনিছুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার॥ চট্টগ্রাম বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম খোন্দকার মোঃ ছমিউদ্দীন এর ডিজিটাল সার্টিফিকেট ওনার সুযোগ্য সন্তান সাধনপুর ইউনিয়নের বিপুল ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান খন্দকার সালাউদ্দিন কামালের নিকট প্রদান করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রদত্ত ডিজিটাল এ সনদে ১৪ ধরনের এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়পত্রে ১২ ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা আছে। গুগলে গিয়ে ‘ফ্রিডম ফাইটার ভেরিফায়ার’ অ্যাপের মাধ্যমে এই সনদ ও পরিচয়পত্রে ইউনিক নম্বর আপ করলে প্রথমেই ৩০ সেকেন্ডে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও জাতীয় সংগীত শোনা যাবে।
সনদে আরও রয়েছে থ্রিডি লোগো, দুটি করে কিউআর কোড, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ফুল শাপলার অ্যাম্বুশ, বীর মুক্তিযোদ্ধার পৃথক তথ্যকণিকা, ইস্যুকারী মন্ত্রী ও সচিবের স্বাক্ষর, ওয়াটার মার্ক, জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধুসহ নানা ধরনের নির্ধারিত আল্টামার্ক। যার অনেক কিছু খালি চোখে দেখা যাবে না।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পদকপ্রাপ্ত খোন্দকার মো. ছমিউদ্দীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিমান বিধ্বংসী গোলন্দাজ বাহিনীর রাড়ার অপারেটর” (নং-২৯২৮৬৫৪) হিসাবে কর্মরত থাকাবস্হায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক আহবানে সাড়া দিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের আইয়ুব লেইনস্হ ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
শুরুতেই বাঁশখালী এসে নিজ এলাকার ৩৫/৪০ জন ছাত্র-যুবককে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ’গঠন করেন। যুদ্ধকালীন নিজে অধীনস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন অপারেশন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থাপনা রাজাকার ক্যাম্পে হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিএলএফ কমান্ডার ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী’র পরামর্শে উনার পরিচিতজন থেকে অস্ত্র সংগ্রহের লক্ষ্যে আনোয়ারার গহিরায় যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ছমিউদ্দীন।
উত্তাল তরঙ্গ ও বৃষ্টির মধ্যে নৌকাযোগে গহিরা পৌঁছে অস্ত্র নিয়ে ভোরে ফিরে আসার সময় রাজাকাররা তাঁকে গিরে ফেলেন। তাদের আক্রমন প্রতিহত করে জীবন বাজি রেখে জুঁইদন্ডী হয়ে দক্ষিণ বরুমচড়া গ্রামে পৌঁছেন। পরবর্তীতে জনাব নাদেরুজ্জামান চৌধুরী সহযোগিতায় সংগৃহীত অস্ত্র নিয়ে বাণীগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছান।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা সদর কর্তৃক সম্পাদিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১ম খন্ড-১নং সেক্টর) বইয়ে উল্লেখ আছে- সার্জেন্ট মো. ছমিউদ্দীন মুক্তিযুদ্ধকালীন ৬ মে দোহাজারী-ধোপাছড়ি-কাপ্তাই টেগর পাহাড় হয়ে ৪ দিন পায়ে হেটে ভারতের মিজুরামস্হ ৮৭নং বিএসএফ ক্যাম্পে পৌঁছে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন এবং কিছু সময়ের জন্য ২নং ফিল্ড ব্যাটারি আর্টিলারিতে সংযুক্ত হন।
যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বরকল ও দোহাজারীতে পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ, চুড়ামনি ফরেস্ট অফিস, বাণীগ্রাম, কোকদন্ডী, খানখানাবাদ ভূমি অফিস, সাধনপুর বোর্ড অফিস ও গুনাগরি ওয়াপদা অফিস রাজাকার ক্যাম্প, বাঁশখালী টেলিগ্রাফ অফিস, সিও রেভিনিউ অফিস এবং বাঁশখালী থানা আক্রমনে নেতৃত্ব প্রদান/মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সর্বশেষ নিজ এলাকায় গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার” হিসাবে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহনের স্বীকৃতি হিসাবে তাঁকে মেডেল/খেতাবে ভূষিত করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পদকসমূহ হল:সজয় পদক, মুক্তি পদক, সমর পদক, রণ তারকা, সংবিধান পদক।
১৯৯২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ-চট্টগ্রাম’ কতৃক তাঁকে “মুক্তিযোদ্ধা পদক” প্রদান করা হয়।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকায় স্মারকস্তম্ভ, স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণকারী এ বীর মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের “সিনিয়র ডেপুটি কমান্ডার,সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফ্রন্ট-চট্টগ্রামের নির্বাহী সদস্য,চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সংস্হা এবং বাঁশখালী মুক্তিযোদ্ধা বহুমূখী সমবায় সমিতি’র উপদেষ্টা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের অকুতোভয় এ বীর ৫ মার্চ ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহন করেন। চাকুরিকালীন তিনি সিনিয়র লিডার ইনটেলিজেন্স,কোর্স সম্পন্ন করেন।
অবসর জীবনে ঠিকাদারী ব্যবসার পাশাপাশি এলাকার শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিলেন। শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বাণীগ্রাম সরকারি প্রা. বিদ্যালয়ের সভাপতি,এবং সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের “চেয়ারম্যান” হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মহান এ বীর মুক্তিযোদ্ধা বিগত ৩ জুন ২০১৫ সালে ভারতের টাটা মেডিকেল সেন্টারে ইন্তেকাল করেন বিগত ৭ বছর অতিবাহিত হলেও রাষ্ট্র এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা স্বরূপ ডিজিটাল সার্টিফিকেট দিতে ভুল করেননি।ডিজিটাল সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে ওনার সুযোগ্য সন্তান সাধনপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খন্দকার সালাউদ্দিন কামাল বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জনিয়েছেন।