মাহবুবুর রহমান জ্যোতি, সিরাজগঞ্জ॥ চলনবিল এলাকায় এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় লিচুর কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলনে তেমন প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। খুচরা ও পাইকারি বাজারে ভালো দামও পাচ্ছেন লিচু চাষীরা। বাম্পার ফলনের কারণে ক্রেতা সমাগমে জমে উঠেছে এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী লিচুর আড়ত। প্রতিদিন কোটি টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আড়ত মালিকরা।
কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার লিচুর আড়তে সব মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, সিংড়া উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর বটতলা, মামুদপুর, নাজিরপুর, মশিন্দা, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের নাদোসৈয়দপুর, ধামাইচ হাট এলাকার ১২-১৫টি লিচুর আড়তে খুচরা ও পাইকারি দরে কেনাবেচা জমে উঠেছে বেশ।
বোরহান মণ্ডল নামে স্থানীয় এক লিচু চাষি জানান, এ বছর বেশি গরম থাকায় অনেক কৃষকের বাগানের লিচু ফেটে নষ্ট হয়েছে। তারপরও বোম্বাই, চায়না-৩ ও মোজাফফর জাতের লিচুর ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তিনি জানান, বোম্বাই জাতের লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৭০০ টাকায়। আর চায়না-৩ জাতের লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০-৪০০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি হাজার মোজাফফর জাতের লিচু ১৮০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আড়তগুলোতে।
গুরুদাসপুর লিচু আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মোকামের শতাধিক আড়তে সারা দিনই লিচুর পাইকারি কেনাবেচা হচ্ছে এখন। এসব লিচু কেনাবেচায় প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। চলতি বছরে তাপমাত্রা ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে লিচুর ফলন আরও বেশি হতো বলে জানান তিনি।
আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে চলনবিলের আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ ট্রাক বোঝাই করে লিচু নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা ছাড়াও পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল, হবিগঞ্জসহ অনেক জেলা থেকে পাইকাররা এসে এখন ভিড় করছেন চলনবিলের আড়তগুলোতে। প্রতি হাজার লিচু গড়ে ১৮০০-২২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ সকল মোকাম থেকে এ বছর কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার লিচু কেনাবেচা হবে বলে এ অঞ্চলের লিচু ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিকদের ধারণা ।
লিচুর আবাদ সম্পর্কে জানতে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ উপজেলায় ১৩ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। শুধু তাই নয়, চলনবিলে এক দশকে লিচুর আবাদও প্রসারিত হয়েছে অনেক। চলতি বছর তাপমাত্রা কিছু বেশি থাকায় প্রথম দিকে লিচুতে সামান্য সমস্যা দেখা দিলেও উৎপাদনে তেমন ঘাটতি সৃষ্টি হয়নি। পাইকারি ও খুচরা বাজারে লিচুর ভালো দাম পাচ্ছেন চলনবিলের কৃষকরা।