মোহাম্মদ জুবায়ের: চট্টগ্রামের ফয়েসলেক এলাকায় বিএনপি নেতা পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তির আবাসিক হোটেলে চলছে জমজমাট দেহ ব্যবসা। ক্ষমতার রদবদল হওয়ায় একটা সময় আওয়ামীলীগের বেশ কিছু নেতা ও স্থানীয় খুলশী থানার কিছু অসাধু পুলিশের যোগসাজশে অত্র এলাকায় দেহ ব্যবসা চললেও এখন ব্যবসা চলছে নিজেকে ত্যাগী বিএনপি নেতা পরিচয়ে। হস্তান্তর হচ্ছে ক্ষমতা, বদলে যাচ্ছে সরকার, তবুও বন্ধ হচ্ছে না কেন এই অসামাজিক কার্যকলাপ এমনটাই যেন এখন প্রশ্ন সেখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। হোটেলটির নাম সিক্স স্বর্নালী আর এর মালিক বিএনপি নেতা পরিচয়দানকারী মো. আনোয়ার।
জানা যায়, এই হোটেলটি ছাড়াও অত্র এলাকায় আরো প্রায় ৪টি আবাসিক হোটেলে সুন্দরী নারী দিয়ে মনের খোরাক যোগানো হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে রিয়েল পার্ক, কনকর্ড, লেকসিটি ও লেকভিউ রিসোর্ট। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিক্স স্বর্ণালীর ২য় তলায় অতিথিদের জন্য রুম ভাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ৩য় তলার সবকটা রুমেই চলে দেহ ব্যবসা। প্রতিবেদক সেখানে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারন করার সময় পর্যন্ত অর্থ্যাৎ ১০ মিনিটের মধ্যে প্রায় ৪ জন গ্রাহকের চাহিদা মিটিয়েছে তারা। শুধু তাই না, হোটেলটিতে জোর করে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের দিয়েও জোরপূর্বক এই দেহ ব্যবসা করানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই সেখানে দেখা মিলেছে ললনাদের আনাগোনা। আদো আদো লাল নিল বাতিতে দেখা যায় এ যেন এক অন্য জগত। এছাড়াও ফয়েসলেকে ঘুরতে আসা যুবক যুবতীদের অবাধ মেলামেশারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তারা। মাত্র ৩০০ টাকায় ঘন্টা হিসেবে হোটেল রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য। ফলে দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠছে অত্র এলাকাসহ আশপাশের উঠতি বয়সি ছাত্র ছাত্রীরা। ক্লাস ফাকি দিয়ে পছন্দের মানুষের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে তারা।
আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, হোটেলটির ম্যানেজার জনাব মো. হাসান নিজেকে পরিচয় দেন একজন সাংবাদিক হিসেবে। তিনি চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি পত্রিকায় নিজস্ব প্রতিবেদকের কাজ করেন বলেও দাবী করেন। যদিও তার দেওয়া তথ্য মতে, এর আগেও অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত এমন অন্তত ১০ হোটেলে কাজ করেছেন তিনি। মো. হাসান বলেন, আমি… পত্রিকায় কাজ করি। তিনি গর্ব করে আরও বলেন, আমাদের এখানে যে এসব কাজ চলে তা সবাই জানে। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করি। আমার হোটেলের মালিক একজন বিএনপি নেতা। আগে তার ক্ষমতা কম থাকলেও এখন দিগুন। ফলে হোটেল চালাতে আমাদের এখন আর কোন সমস্যা হয় না।
তবে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে উক্ত হোটেলে গিয়ে মালিক জনাব মো. আনোয়ারের বক্তব্য নিতে গেলে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি নিজেকে বিএনপির ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদকের সাথে শাসনের সূরে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি বিএনপি নেতা। আমার হোটেলে কোন অসামাজিক কাজ চলে না। আপনি যেই মেয়েগুলোকে দেখেছেন, তারা বন্যা কবলিত এলাকার। আমি তাদের এখানে আশ্রয় দিয়েছি।
পরে অবশ্য একটা সময় তিনি স্বীকার করে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে চান। তিনি বলেন, সংবাদ প্রকাশ করার দরকার নাই ভাই। আপনার কোন চাহিদা থাকলে বলেন।
উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে এবং এই সমস্যা সমাধানে কি ধরনের পদক্ষেপ রয়েছে এই বিষয়ে জানতে খুলশী থানার ওসির মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, আমরা এর আগেও এই হোটেলসহ আশ পাশের বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান অত্র এলাকার স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল। তারা মনে করেন, সরকার সংস্কারের মত পরিবর্তন করতে হবে গোটা সমাজকে, তবেই বন্ধ হবে এই অপরাধ। আর এতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা জরুরী বলেও মত তাদের।