মোঃ ফিরোজ আহমেদ পাইকগাছা (খুলনা) :
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সুন্দরবন, বর্তমানে এক গুরুতর পরিবেশগত সংকটের মুখে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সুন্দরবনের খালে অবাধে পারশে পোনা শিকার করা হচ্ছে, যা এই অমূল্য বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য এবং জলজ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় মাছধরারা বিশেষভাবে এই সময়টাতে পারশে পোনা শিকার করে, যা মৎস্যপ্রজনন নষ্টের পাশাপাশি নদী ও খালের জীববৈচিত্র্যও বিপন্ন করছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এ ধরনের অবৈধ শিকার বন্ধ না হলে সুন্দরবনের এক্সোসিস্টেম বা পরিবেশের ভারসাম্য ভেঙে পড়তে পারে। বিশেষ করে মাটির নিচে এবং পানির স্তরে থাকা শৈবাল, মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য জলজ প্রাণীসমূহের প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া, এই অঞ্চলটি বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সুমাত্রান হরিণ, এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পাখির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্থান, যেখানে কোনও ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট হস্তক্ষেপ তাদের অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা ও এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য সরকারের তৎপরতা জরুরি। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবি, অবিলম্বে এই অবৈধ শিকার বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারা বলছেন, সুন্দরবনের এই অপূরণীয় ক্ষতি ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও সচেতন করতে হবে, যাতে তারা এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
পাইকগাছা উপজেলার তরুন কুমার হালদার বলেন “আমরা জানি, পারশে পোনা নিধন করা ক্ষতিকর, কিন্তু কিছু লোক তা নিয়মিত করে যাচ্ছে। আমরা চাই সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিক, যাতে আমাদের সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যায়।”অন্যদিকে, পরিবেশবাদী সংগঠন “সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন” এর সদস্য, তুষার হোসেন বলেন, “এটি শুধু সুন্দরবনের ক্ষতি নয়, পুরো দেশের মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় আঘাত। স্থানীয় প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামী দিনে এর ফল ভয়াবহ হতে পারে।” এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে শুধু সুন্দরবন নয়, পুরো দেশে জলজ প্রাণী এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কার্যক্রমেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।