
কাইয়ুম চৌধুরী, সীতাকুন্ড॥ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে উপজেলার বাড়বকুন্ডস্হ পাহাড়ের পাদদেশ সংলগ্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা টায়ার পুড়িয়ে কালো তেল তৈরির করছে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবত। দুইবার পরিবেশ অধিদপ্তর, র ্যাব,পুলিশ অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়, সাথে জরিমানাও করে তারপরও থামছেনা তাদের অবৈধ কার্যক্রম। কারখানাটি বন্ধের দাবীতে ফুঁসে উঠেছে তিনটি এলাকার ভোক্তভোগী চার হাজার এলাকাবাসী।
ভোক্তভোগীরা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর এ কালো তেলের কারখানাটি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.শাহাদাত হোসেন বরাবরে গতকাল বুধবার স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ব্যাংকার খুরশেদ আলম চৌধুরী জানায়, রাজু ও জহির আহাম্মদ সহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসন ও পরিবেশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ সংলগ্ন উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের আলী চৌধুরী পাড়া এলাকার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে টায়ার পুড়িয়ে কালো তেল তৈরির কারখানাটি গড়ে তোলে। কারখানাটির কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের দুষিত গন্ধে পরিবেশে ভারী হয়ে উঠার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে নারী-পুরুষ এবং শিশুরা। এছাড়া নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহন করা বিষাক্ত পোড়া গন্ধে পেটের ব্যথায় ভোগছেন অধিকাংশ এলাকাবাসী। বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে একদিকে যেমন তিন এলাকার কোন ফলের গাছে ফল ধরছে না, অন্যদিকে পাহাড় থেকে নেমে আসা বারোমাসি ঝরনার পানিতে ফেলে বিষাক্ত বর্জ্যর কারনে কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়ে লোকসান গুণতে হয় কৃষকদের। তারা এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এতে কোন প্রতিকার না পেলে তারা কারখানাটি বন্ধে মানববন্ধন সহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করবেন।
ভুক্তভোগী ভায়েরখীল এলাকার বাসিন্দা মাষ্টার খুরশেদ আলম বলেন, প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতে আধাঁরে অবৈধ এ কারখানাটি পরিচালিত হয়। এতে প্রতিরাতে টায়ার পোড়ানোর কালো ধোঁয়ার উৎকট গন্ধে জনজীবনে নাভিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষের ক্ষতির পাশাপাশি অব্যাহত লোকসানে অনাবাদি পড়ে রয়েছৈ কৃষি জমি। পাশাপাশি বিষাক্ত ধোঁয়ার গন্ধে পেটে ব্যাথা,বমি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসী। তিনি আরও বলেন, এর আগে এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে কারখানাটি বন্ধে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনের নের্তৃত্বে অভিযান চালানো হয়েছিলো। অভিযানকালে কারখানাটি সিলগালা করার পাশাপাশি অবৈধ কারখানা গড়ে তুলতে জায়গা ভাড়া দেওয়ায় খাইরুল বশর চৌধুরী নামে জায়গার দখলীয় মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান পরবর্তীতে মাসখানেক কারখানাটি বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরে আসে। তবে এরপর আবারো রাতের আধাঁরে কারখানাটিতে টায়ার পুড়িয়ে কালো তেল তৈরির কাজ শুরু হয়। এর ফলে আবারো জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। তারা এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে কারখানাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানান।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিগোগপত্রটি তিনি পেয়েছেন। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কারখানা থাকা কোন মতেই সমুচিন নয়। কারখানাটি বন্ধে এর আগেও অভিযান চালানো হয়েছিলো। সহসাই অভিযান চালিয়ে কারখানাটি স্থায়ীভাবে সিলগালা করে দেওয়া হবে।
স্হানীয় মেম্বার জহির উদ্দিন জানায়, পাহাড়ের পাদদেশে এই অবৈধ টায়ার পুড়িয়ে কালতেল তৈরীর কারখানাটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এলাকাবাসী খুব কষ্টে আছে, শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, এলাকায় ফল ফলাদি গাছে ফল ধরছেনা,রাতে কালো ধূয়ায় বাড়ীঘরে বসবাস কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে।এই কারখানাটি স্হায়ীভাবে বন্ধের দাবী জানান তিনি।