শাকিল হাসান, জামালপুর॥ জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর বিয়ারা পলাশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শাহবাজপুরে বিয়ারা পলাশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ জন কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, ১ জন অফিস সহায়ক, ১ জন পরিছন্নকর্মী ও ১ জন আয়া পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে এবং বিগত ২০ অক্টোবর লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষা গ্রহণের জন্য ডিজি প্রতিনিধি জমালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে প্রার্থীদের ডাকা হয়। সে সময় পরিক্ষা গ্রহণের পূর্বে প্রবেশপত্র দেওয়ার নাম করে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। প্রার্থীরা টাকা দিতে তালবাহনা করতে থাকলে সেসময় লিখিত পরিক্ষা শেষে মৌখিক পরিক্ষা না নিয়ে পরিক্ষা কেন্দ্র ত্যাগ করেন প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তা এবং ওই দিন মৌখিক পরিক্ষা স্থগিত করা হয়। পরবর্তিতে গত ২৮ অক্টোবর প্রার্থীদের কোন প্রকার প্রবেশ পত্র ইস্যু না করেই তাদের পছন্দের প্রার্থীদের থেকে (৩৫ থেকে ৪০ লাখ) মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে শুধুমাত্র তাদেরকেই মৌখিক পরিক্ষার জন্য ডাকা হয়। রেজুলেশন বহিতে পূর্বেই কমিটির স্বাক্ষরিত রেজুলেশন দেখিয়ে গত ২৯ অক্টোবর তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং তার একদিন পর ৩০ অক্টোবর প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন কাগজপত্রাদি ও হিসাব নিকাশ হস্তান্তর না করে সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তার যোগসাজসে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন প্রধান শিক্ষক। সেইদিন হতে আজ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক কিংবা সভাপতি কেউ আর বিদ্যালয়ে আসেন নি বলে জানা যায়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. এমদাদুল জানান, প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার আগে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাদের জানায় নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে বলে জানান। কিন্তু হাতে টাকা পাওয়ার পর তাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন তারা এই টাকার কথা অস্বীকার করেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বাবুল হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অনেক কাজ বাকী রয়েছে এসব কাজ করার জন্য এই ৪ পদে নিয়োগের জন্য প্রায় ৩৯ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। এখন সে টাকা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির পকেটে। বিদ্যালয়ের এতগুলো টাকা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ভাগাভাগি করে নিয়েছে। তাদের সাথে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাও জড়িত আছে।
ম্যানেজিং কমিটির আরেক সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, নিয়োগের বিনিময়ে টাকা নেওয়া একটি অপরাধ আবার সেই টাকা যদি কেউ আত্মসাত করে তবে সেটা আরও বড় অপরাধ। অবিলম্বে এসব টাকা আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থার দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব আলী জানান, আমার পূত্রবধু পরিক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার পরও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ৫ লাখ টাকা দাবি করে এবং বলতে থাকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য এ টাকা দিতে হবে। পরে আমি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা তাদের হাতে দেই। এখন জানতে পারলাম তারা আমার কাছে মিথ্যা বলে টাকা নিয়েছে। আমি টাকা দিয়েছি, বিনিময়ে চাকরি পেয়েছি। এই এলাকার অনেকেই আছে এই ৪ টি পদের জন্য সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের হাতে টাকা দিয়েছে কিন্তু তারা চাকরি পায়নি।
অভিযোগ প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তা জানান, বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরিক্ষায় যার যার যোগ্যতায় নিয়োগ হয়েছে এখানে কোন অর্থের লেনদেন হয়নি।
প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি যা বলেছেন সেটাই আমারও বক্তব্য।
নিয়োগ কার্যক্রমের প্রত্যেকটি ধাপে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছানোয়ার হোসেন। শাহবাজপুর বিয়ারা পলাশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ৪ টি পদে নিয়োগে কেন এত তালবাহানা হলো কিংবা একই দিনে লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও কেন তা নেওয়া হলো না এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ পরিক্ষা কোথায় হবে কবে হবে এটা সম্পূর্ণ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ব্যাপার। তারা ইচ্ছামত এটা পরিবর্তন করতে পারে। আর নিয়োগে কোন প্রকার লেনদেন হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না।
একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপের জন্য শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক মন্ডলী ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসব স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপের প্রভাবে বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত বিধান লংঘনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমন দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ জনগন।