মোঃ ফিরোজ আহমেদ,পাইকগাছা (খুলনা) : খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারী রোগীর মধ্যে খাবার বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মানসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ দীর্ঘ বছরের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এধরনের অনিয়ম করে আসছে। এই হাসপাতালের রোগীদের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে কম এবং নিম্নমানের খাবার দেয়ার অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
খাবারের এমন অনিয়মের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা চাঁদখালী ইউনিয়নের শাহজাহান বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে গত দুই দিন থেকে ভর্তি হাসপাতলে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের কারণে বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬০ বছরের আবুল আহম্মেদ । তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা মুখে নেওয়া যায় না। এজন্য বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খান তিনি।
লস্কর গ্রামের রহিম কাগুজী বুকে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর তার কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। বুধবার দুপুরে খাবার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় লাউ, মুরগির মাংস। খেতে না পেরে পাশেই খাবার প্লেট রেখে দিয়েছেনে।
জানা যায়, একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন খাবারে সরকারী ভাবে ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করায় তা খেতে পারেন না অধিকাংশ রোগীরা। অনেকেই খাবার না খেয়ে ফেলে দেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে খাবার না নিয়ে বাড়ি থেকে এনে খান।
দরপত্র অনুযায়ী একজন রোগীর সকালের জন্য প্রতিদিন রুটি, একটি কলা, একটি ডিম ও ২৫ গ্রাম চিনির জন্য মোট ৩৬ টাকা ২৫ পয়সা বরাদ্দ রয়েছে। দুপুরে ও রাতে চিকন চালের ভাত, বা রুই মাছ, খাশি বা ব্রয়লার মুরগির মাংস, মুগডাল, ফুলকপি, গোলআলু, শিম ও পটল সহ সর্বমোট ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহে মোটা চাল, নিম্ন মানের কলা, রুটি সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশ রোগীরাই মোটা চালের ভাত খেতে পারেন না।
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন অভিযোগ করে জানান, এ হাসপাতালে প্রধান কর্মকর্তা যোগসাজসে রোগীদের খাদ্য সরবরাহে অনিয়ম হচ্ছে।প্রতিদিন রোগীদের খাদ্য পরিমাপ করা হয় না। খাদ্যের মান যাচাইও করেন না। মাসে মাসে এসব কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিয়েই ম্যানেজ করে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। আর বাবুর্চি নিম্নমানের তৈল, মসলা দিয়েই রান্না করছে এসব খাদ্য। ঠিকাদার এখানে তেমন আসেন না। লোকজন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাক্তার মাহবুবর রহমান বলেন, খাদ্য সরবরাহের কোন অনিয়ম নেই বা আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেন নাই। যদি কোন অভিযোগ পান তাহলে আমাদের জানান। রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়ম রয়েছে তা জানা নেই। তবে জখন জানলাম তখন বিষয়টি খতিয়ে দেখব।